জোয়ান গাম্পের

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জোয়ান গাম্পের
১৯১০ সালে জোয়ান গাম্পের
জন্ম
হান্স মাক্স গাম্পের-হ্যাসিগ

(১৮৭৭-১১-২২)২২ নভেম্বর ১৮৭৭
উইন্টার্থুর, সুইজারল্যান্ড
মৃত্যু৩০ জুলাই ১৯৩০(1930-07-30) (বয়স ৫২)
সমাধিসেমেতেরি অব মন্তজুইস
৪১°২১′১৯″ উত্তর ২°০৯′১৮″ পূর্ব / ৪১.৩৫৫২৯৯° উত্তর ২.১৫৫০৬১° পূর্ব / 41.355299; 2.155061 (Montjuïc Cemetery)
নাগরিকত্বসুইস এবং স্পেনীয়
পেশা
  • ক্রীড়াবিদ
  • ব্যবসায়ী
পরিচিতির কারণফুটবল ক্লাব জুরিখফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার প্রতিষ্ঠাতা, ফুটবল ক্লাব বাজেলের খেলোয়াড়
রাজনৈতিক দলপারদীর স্বাধীনতা পার্টি

ফুটবল খেলোয়াড়ি জীবন
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
এক্সেলসিয়র
জুরিখ
বাজেল
১৮৯৯–১৯০৩ বার্সেলোনা ৫৫ (১২৬)
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

হান্স মাক্স গাম্পের-হ্যাসিগ[১] (জার্মান উচ্চারণ: [hans maks ˈɡampər ˈhɛːsɪg]; ২২ নভেম্বর ১৮৭৭ – ৩০ জুলাই ১৯৩০), সাধারণত জোয়ান গাম্পের নামে পরিচিত (আইপিএ: [ʒuˈaŋ ˈɡampər]), সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী একজন বহুমুখী ক্রীড়াবিদ এবং ফুটবল নির্বাহী ছিলেন। তিনি সুইজারল্যান্ড এবং স্পেনে ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রখ্যাত ক্লাব- ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এবং ফুটবল ক্লাব জুরিখ

ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার অপেশাদার যুগে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসাবে বিবেচিত হন। ১৮৯৯ সালে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব স্থাপনের পিছনে মূল ও প্রধান ব্যক্তি এবং ১৮৯৯ থেকে ১৯০৩ পর্যন্ত ক্লাবের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বার্সেলোনার হয়ে মাত্র ৪৮ ম্যাচে ১০০ টিরও বেশি গোল করেন। তিনি বার্সেলোনা দলের অধিনায়কত্ব করেন এবং ১৯০২ সালে কোপা মাকায়ায় জয় পান, যেটি ক্লাবটির প্রথম শিরোপা।[২] ১৯০৮ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে পাঁচটি পৃথক মৌসুমে ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। ১৯০৯ সালে বার্সেলোনার নিজস্ব স্টেডিয়াম কাম্প দে লা ইন্দাস্ত্রিয়া নির্মাণের জন্য তহবিল জোগাড় করা তার বর্নাঢ্য কর্মজীবনের অন্যতম সেরা অর্জন, যা ১৯১০-এর দশকে ক্লাবের সম্তৃদ্ধিতে প্রধান উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়।[৩] গাম্পেরের নেতৃত্বে বার্সেলোনা এগারোটি চ্যাম্পিওনাত দে কাতালুনিয়া, ছয়টি কোপা দেল রেই এবং চারটি পাইরেনিস কাপ জিতেছে।

প্রারম্ভিক বছর[সম্পাদনা]

হান্স-মাক্স গাম্পের (তার মায়ের প্রথম নাম – হ্যাসিগ – সাধারণত স্পেনীয় সূত্রে যুক্ত হয়) সুইজারল্যান্ডের উইন্টারথারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং বাবা অগাস্ট গ্যাম্পার এবং মা রোজিন এমা হেসিগের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। আট বছর বয়সে তার মা যক্ষ্মায় মৃত্যুবরণ করেন অতঃপর তার পরিবার জুরিখে গমন করে। তিনি জুরিখে থিতু হন এবং জুরিখ শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চল প্যারাডেপ্লাটজ-এ রেশম বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান গ্রিডারে শিক্ষানবিশে কাজ শেখা শুরু করেন এবং যেন পরবর্তীতে একজন নিপুণ ব্যবসায়ী হন।[৪] যুবক হিসেবে গাম্পের তুখোড় সাইকেল চালক এবং দৌড়বিদ ছিলেন। ১৮৯৩ সালে ১৫ বছরবয়সে গাস্তোন বেগুইনের বিরুদ্ধে একটি ১০০ কিলোমিটারের বেশি সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় সুইস চ্যাম্পিয়ন এডুয়ার্ড উইকির পেসারদের একজন ছিলেন।[৫] তিনি সবসময় ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন এবং ফুটবল ছাড়াও তিনি রাগবি ইউনিয়ন, টেনিস এবং গল্‌ফও খেলতেন।[৬] সুইজারল্যান্ডে তিনি একজন ফুটবলার হিসাবে অত্যন্ত সমাদৃত ছিলেন। এক্সেলসিয়র জুরিখ তার প্রথম ফুটবল ক্লাব ছিল; যা বার্সেলোনার মতো (পরবর্তীতে) একই রঙের পোশাকে (লাল এবং নীল) খেলতো।[৭] গাম্পের ছিলেন ক্লাবটির একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্লাবের ইতিহাসের প্রথম অধিনায়ক। সুইজারল্যান্ডে ফুটবলের প্রারম্ভিক বছরগুলোতে প্রীতি ম্যাচসমূহে অন্যান্য শহরের ক্লাবগুলিতে অতিথি খেলোয়াড় হিসেবে খেলার অনুমতি ছিল, এক্ষেত্রে অন্যক্লাবের সংখ্যা অনির্দিষ্ট ছিল। এক্সেলসিয়রে থাকাকালীন গাম্পের ফুটবল ক্লাব উইন্টারথার এবং ফুটবল ক্লাব বাজেলের হয়ে দুটি ম্যাচ অতিথি খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছিলেন বলে জানা যায়। এফসি জুরিখের মল্লক্রীড়া দলের প্রতিনিধি হিসেবে হান্স গাম্পের ১৮৯৮ সালে ৮০০ মিটার এবং ১৬০০ মিটার দৌড়ে সুইস রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন।[৮] একই বছরের শরৎকালে তিনি জুরিখে প্রথম আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেন। বর্তমানে এই ওয়েল্টক্লাস জুরিখ (ফুটবল ক্লাব জুরিখ স্পিন-অফ এলসি জুরিখ দ্বারা সংগঠিত) ইভেন্টটি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মল্লক্রীড়া ইভেন্টগুলির মধ্যে একটি। ১৮৯৭ সালে তিনি কর্মসূত্রে সাময়িকভাবে ফ্রান্সের লিওঁতে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি অ্যাথলেটিক ইউনিয়নের হয়ে রাগবি খেলেন।[৬]

ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা[সম্পাদনা]

ক্লাবের প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

লস দেপোর্তেসে গাম্পেরের ১৮৯৯ সালের বিজ্ঞাপন

১৮৯৯ সালে গাম্পের বার্সেলোনায় বসবাসরত তার চাচার সাথে দেখা করতে যান। তিনি মূলত কিছু চিনির ব্যবসায়িক কোম্পানি স্থাপনে সাহায্য করার জন্য আফ্রিকায় যাচ্ছিলেন কিন্তু কাতালান শহরের প্রেমে পড়েন এবং সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পরে একজন সাবলীল কাতালান ভাষী হয়ে উঠেন এবং তার নামের কাতালান সংস্করণ গ্রহণ করেন: "জোয়ান গাম্পের"। একজন হিসাবরক্ষক হিসেবে তিনি সররিয়া রেলওয়ে কোম্পানির ক্রেডিট লিওনাইসের সাথে কাজ পেয়েছিলেন এবং একজন ক্রীড়া কলামিস্ট হিসেবে তিনি দুটি সুইস সংবাদপত্রের জন্য কাজ করেছিলেন।[৯] গাম্পের স্থানীয় সুইস ইভানজেলিকাল চার্চে যোগদান করেন এবং সররিয়া-সান্ট গেরভাসি জেলার স্থানীয় খ্রিস্টান প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের সাথে ফুটবল খেলা শুরু করেন। তার অবসর সময়েও তিনি ভেলোদ্রোমো দে লা বোনানোভাতে একদল বন্ধুর সাথে ফুটবল খেলেন।[৯]

গাম্পের ইতিমধ্যেই নিজের দেশে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (ফুটবল ক্লাব জুরিখ), যখন তার নতুন শহরে একই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি তোলোসা ব্যায়ামাগারের পরিচালক জেইমে ভিলার সাথে যোগাযোগ করেন, তোলোসা ব্যায়ামাগার সে সময়ে ফুটবল উৎসাহীদের একটি দলের হোম ছিল যারা বোনানোভাতেও খেলাধুলার অনুশীলন করছিল। গাম্পের জেইমে ভিলাকে একটি সুসংগঠিত ফুটবল ক্লাব তৈরির ধারণার প্রস্তাব দেন, কিন্তু ভিলা তার প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করেন কারণ তিনি বিদেশীদের দলে চান না এবং ১৮৯৯ সালের অক্টোবরে কাতালা ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এটি গাম্পেরকে নিরুৎসাহিত করেনি, গাম্পের তখন এমন একটি সংস্থা তৈরি করার লক্ষ্যে রয়েছে যা তাদের উৎস নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। তিনি এমন একটি ক্লাবের কল্পনা করেছিলেন যা সামাজিক একীকরণের একটি মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে, যেখানে প্রত্যেকে তাদের মনের কথা বলতে পারে এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করতে পারে যা তার সদস্যদের দ্বারা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে।[৯]

এর পরপরই তিনি এবং তার বন্ধু ওয়াল্টার ওয়াইল্ড জিমন্যাসিও সোলেতে পৌঁছান। সেখানে তারা নার্সিসো মাসফেরার দ্বারা ভালভাবে সমাদৃত হয়েছিল। নার্সিসো মাসফেরার কাছে তার অসংখ্য অ্যাসোসিয়েশন এবং লস দেপোর্তেস ব্যায়ামাগারে নিউজরুমের সদর দফতর ছিল এবং তারা ২২ অক্টোবর ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত একটি ফুটবল ক্লাব গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করে গাম্পেরের কুখ্যাত বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করেন।[৬][১০][১১] একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ফলে ২৯ নভেম্বর জিমনাসিও সোলে একটি মিটিং হয় এবং "ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা" এর জন্ম হয়। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে সুইস, ব্রিটিশ এবং স্পেনীয় উৎসাহীদের একটি সংগ্রহ অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১২][৯][ক] ফুটবল ক্লাব বাজেল বা এক্সেলসিওর জুরিখের পরে গাম্পের কিংবদন্তি ক্লাব রং ব্লাউগ্রানা বেছে নিয়েছিলেন কিনা তা জানা যায়নি, যদিও অফিসিয়াল সংস্করণে বলা হয়েছে যে আর্থার এবং আর্নেস্ট উইটি দুই ভাই (দুজনেই প্রথম বছরগুলিতে ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন) ব্লাউগ্রানা রংয়ের প্রস্তাব করেছিলেন, গ্রেট ক্রসবির মার্চেন্ট টেইলর'স স্কুলের রাগবি দলও একই রঙ ব্যবহার করেছিল (যাতে তারা অংশগ্রহণ করেছিলেন)।[১৩][৯]

খেলোয়াড়ি জীবন[সম্পাদনা]

১৯০২ সালে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার খেলোয়াড় হিসেবে গাম্পের

যদিও গাম্পের ছিলেন ক্লাবের চালিকা শক্তি, তবুও প্রাথমিকভাবে তিনি নিজেকে শুধুমাত্র একজন বোর্ড সদস্য এবং ক্লাবের অধিনায়কত্ব করতেন। তার বয়স তখনও মাত্র ২২, তিনি খেলায় মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলেন। ১৮৯৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বোনানোভাতে অনুষ্ঠিত টিম আংলেস নামে পরিচিত বার্সেলোনায় বসবাসকারী ব্রিটিশ উপনিবেশের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি দলের বিরুদ্ধে ক্লাবের প্রথম খেলায় অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তার নেতৃত্বে দল ০–১ গোলে হার মানে।[১০][৬][১৪] ক্লাবের ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলায় তিনি বার্সার ইতিহাসের প্রথম গোলটি করেন।বার্সার হয়ে ক্লাবের দ্বিতীয় গোলও তার করা। কাতালা ফুটবল ক্লাবের বিপক্ষে ৩–১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচটিতে তিনি দুইটি গোল করেছেন।[১০] গাম্পের ১৮৯৯ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে ৫৫টি ম্যাচ খেলেন এবং ১২৬টি গোল করেন, ম্যাচ প্রতি তার গোলগড় ছিল ২.৩৫।[১০] গাম্পের তার বেশিরভাগ গোল আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতায় করেছিলেন, যার মধ্যে ৩১টি একাই ১৯০০–০১ কোপা মাকায়াতে এসেছিল, ফ্রাঙ্কো-এস্পানিওলা এবং ক্লাব তারাগোনার বিপক্ষে ৯-গোল (দুইবার) এবং ফ্রাঙ্কোর সাথে ফিরতি খেলায় আরও ৮ গোল করেন, কিন্তু গোল করতে পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও হিস্পানিয়া এসির কাছে তিনি গোল কররে পারেননি।[১৫] পরবর্তী মৌসুমে তিনি বার্সেলোনাকে ক্লাবের প্রথম শিরোপা ১৯০১–০২ কোপা মাকায়া জিততে সাহায্য করেন, যেখানে ১৯০২ সালের ২৩ মার্চ কাতালা এসসির বিপক্ষে ১৫–০ ব্যবধানে জয়ের ফাইনাল ম্যাচের দিনে হ্যাট্রিক করেন।[২] তিনি ১৯ গোল করে প্রতিযোগীতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন, সতীর্থ উদো স্টেইনবার্গের চেয়ে মাত্র দুইটি গোল বেশি ছিল। কোপা মাকায়া বর্তমানে প্রথম কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপ হিসেবে স্বীকৃত।

১৯০২ সালে গাম্পের বার্সেলোনা দলের একজন নিয়মিত সদস্য হিসেবে কোপা দে লা করোনাসিওনে (কোপা দেল রেই এর পূর্বসূরি) অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৩ মে সেমিফাইনালে বার্সা প্রথমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবের (তখন মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব) মুখোমুখি হয়েছিল, গাম্পের এতে একটি গোল করে তার দলকে প্রথম এল ক্লাসিকোতে জয় পেতে সাহায্য করেন।[১৬] যদিও ফাইনালে বার্সা ক্লাব ভিজকায়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে যায়।[১৭] ১৯০৩ সালে তিনি, কোপা বার্সেলোনায় প্রথম বার ক্লাবের হয়ে খেলেন, যা পরে কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ সংস্করণ হিসাবে স্বীকৃত হয়। ১৯০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গাম্পের ৯ গোল করে বার্সাকে কোপা বার্সেলোনায় এক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে ১৩–০ ব্যবধানে জয়ী হতে সাহায্য করেন, এইভাবে বার্সেলোনায় তার কর্মজীবনে তিনটি ৯-গোল করা প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন।[১০] প্রকৃতপক্ষে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এটি করেছেন, যদিও জোসেপ এসকোলা ১৯৩৫ সালে রিয়াল ইউনিয়নকে ১১–১ হারানোর ম্যাচে বার্সার হয়ে ৯ গোল করেছিলেন, কিন্তু এটি একটি প্রীতি ম্যাচ ছিল।[১৮]

ক্লাবের সভাপতিত্ব[সম্পাদনা]

১৯০৮ সালে গাম্পের প্রথমবারের মতো বার্সেলোনার সভাপতি হন। ক্লাব বন্ধ হওয়ার পথে গাম্পের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন। ক্লাবের বেশ কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় অবসর নিয়েছিল, কিন্তু তাদের বদলি খেলোয়াড় আনা হয়নি। এটি শীঘ্রই মাঠে এবং বাইরে ক্লাবের খেলাকে প্রভাবিত করে। ১৯০৫ সালের কাম্পিওনাত দে কাতালুনিয়ার পর থেকে ক্লাবটি কোনো শিরোপা জয় করতে পারেনি এবং এর ফলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীকালে গাম্পের পাঁচটি পৃথক মৌসুমে (১৯০৮–০৯, ১৯১০–১৩, ১৯১৭–১৯, ১৯২১–২৩ এবং ১৯২৪–২৫) ক্লাবের সভাপতি ছিলেন এবং ২৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন।[৯] তার অন্যতম কৃতিত্ব ছিল বার্সার নিজস্ব স্টেডিয়াম বানানোয় সহায়তা করা। ১৯০৯ সাল পর্যন্ত দলটি বিভিন্ন মাঠে খেলেছিল, সেগুলোর কোনটিই ক্লাবের মালিকানাধীন ছিল না। গাম্পের স্থানীয় ব্যবসা থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন এবং ১৪ মার্চ ১৯০৯ সালে বার্সা তাদের স্বাগতিক স্টেডিয়াম কাম্প দে লা ইন্দাস্ত্রিয়াতে স্থানান্তরিত হয়, এটির প্রাথমিক দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল ১,৫০০ এবং ১৯১৬ সালে বৃদ্ধি করে ৬,০০০ হয় এবং এটি শহরের সেরা স্টেডিয়াম বলে বিবেচিত ছিল। তিনি আরও ক্লাব সদস্য নিয়োগের জন্য একটি প্রচারণাও শুরু করেছিলেন এবং ১৯২২ সাল নাগাদ ক্লাবটির ১০,০০০-এর বেশি সদস্য ছিল। এর ফলে ক্লাবটির স্বাগতিক মাঠ লেস কোর্তসে্-এ স্থানান্তর করা হয়। এই স্টেডিয়ামটির প্রাথমিক ধারণক্ষমতা ছিল ২০,০০০, পরে ১৯৪৬ সালে ৪৮,০০০-এ প্রসারিত হয়।[১৯]

গাম্পের সভাপতিত্বে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এগারোটি চ্যাম্পিওনাত দে কাতালুনিয়া, ছয়টি কোপা দেল রেই এবং চারটি পিরেনিস কাপ জিতেছিল, যা ছিল ক্লাবটির প্রথম স্বর্ণযুগ। আলকানতারার পাশাপাশি গ্রিনওয়েলের অধীনে বার্সা দলে সাগিবার্বা, রিকার্ডো জামোরা, জোসেপ সামিটিয়ার, ফেলিক্স সেসুমাগা এবং ফ্রাঞ্জ প্লাটকোও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[২০]

গাম্পেরের চূড়ান্ত সভাপতিত্ব বিতর্কিত পরিস্থিতিতে এবং ব্যক্তিগত দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল। ২৪ জুন ১৯২৫-এ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ভক্তরা স্পেনীয় জাতীয় সঙ্গীতকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে এবং একটি পরিদর্শনকারী ব্রিটিশ রয়্যাল মেরিন ব্যান্ড দ্বারা পরিবেশিত গড সেইভ দ্য কিং-এর প্রশংসা করে। প্রিমো দে রিভেরার একনায়কত্ব কাতালান জাতীয়তাবাদ প্রচারের জন্য গাম্পেরকে অভিযুক্ত করেছিল।[২১] কাতালুনিয়ার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ গাম্পের ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনাকে "কাতালান পরিচয়ের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি"-কে সংজ্ঞায়িত করেছেন।[৯] ১৯২৫ সালের লেস কোর্তসের ঘটনার পর গাম্পেরকে নির্বাসনে বাধ্য করা হয়।[১০]

১৯২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সমস্ত কাতালান ফুটবল তাকে শ্রদ্ধা জানায় এবং ১৯৩৪ সালের ২৪ জুন লেস কোর্তস্ মাঠে আরেকটি মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানানো হয়।[১০]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

বার্সেলোনায় গাম্পেরের শেষকৃত্য

১৯৩০ সালের ৩০ জুলাই গাম্পের আত্মহত্যা করেন।[২২] ব্যক্তিগত এবং অর্থ সমস্যার কারণে বিষণ্নতার পর আত্মহত্যা করেছিলেন এবং তাকে মন্তজুইকের কবরস্থানে শায়িত করা হয়েছিল। তার শেষকৃত্যে শহরের বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।[২৩] ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা তার কফিন মন্তজুইক কবরস্থানে নিয়ে যান, যেখানে গাম্পেরকে সমাহিত করা হয়েছিল।[২১]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

১৯৬৬ সালে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার সভাপতি এনরিক লাউডেট তার সম্মানে জোয়ান গাম্পের ট্রফি তৈরি করেন।[২১] এটি একটি প্রাক-মৌসুম প্রতিযোগিতা যেখানে অতিথি হিসাবে আন্তর্জাতিক দলগুলিকে সমন্বিত করা হয় এবং আগামী মৌসুমের জন্য দল উন্মোচন করার জন্য এটি ঐতিহ্যগতভাবে ক্লাব দ্বারা ব্যবহৃত হয়। ক্লাবটি স্থায়ীভাবে গাম্পেরের ক্লাব সদস্যপদ নম্বরটির অবসর দেয় এবং তার নামে শহরের একটি রাস্তার নামকরণ করে, লেস কোর্তস জেলার কারের দে জোয়ান গাম্পের তার নামে। ২০১৬ সালেও জুরিখে শহরের কেন্দ্রীয় স্থানে একটি ছোট রাস্তা ইতিমধ্যেই "গাম্পেরসত্রাসে" নামে তাকে উৎসর্গ করা হয়েছে।[২৪]

অর্জন[সম্পাদনা]

ক্লাব[সম্পাদনা]

ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা

  • কোপা মাকায়া :
    • বিজয়ী: ১৯০১–০২
    • রানার আপ: ১৯০০–০১
  • কোপা দে লা কোর্নাসিঁও :
    • রানার আপ: ১৯০২
  • কোপা বার্সেলোনা :
    • বিজয়ী: ১৯০২–০৩

স্বতন্ত্র[সম্পাদনা]

  • কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ স্কোরার: ৩১ গোল সহ ১৯০০–০১, ১৯ গোল সহ ১৯০১–০২ এবং ২১ গোল সহ ১৯০২–০৩ (কোপা বার্সেলোনা)।

টীকা[সম্পাদনা]

  1. বারোজন প্রতিষ্ঠাতা হলেন জোয়ান গাম্পের, ওয়াল্টার ওয়াইল্ড, লুইস দে ওসো, বার্তোমেউ তেরাদাস, ওতো কুঞ্জল, ওতো মায়ার, এনরিক ডুকাল, পেরে ক্যাবট, জোসেপ লোবেট, জন পার্সনস এবং উইলিয়াম পার্সনস।

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Rodes i Català, Agustí (২০০১)। Joan Gamper, una vida entregada al FC Barcelona (কাতালান ভাষায়)। Ediciones Joica। পৃষ্ঠা 270। আইএসবিএন 978-84-931884-5-0 
  • Gamper Soriano, Emma (২০০৮)। De Hans Gamper a Joan Gamper: una biografia emocional (কাতালান ভাষায়)। Editorial El Clavell। পৃষ্ঠা 252। আইএসবিএন 978-84-89841-48-2 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Hans Gamper – FC Winterthur"। ৯ অক্টোবর ২০১৬। ৯ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২২ 
  2. "Barça Rewind: The first ever title"www.fcbarcelona.com। ২৩ মার্চ ২০২০। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২২ 
  3. "El campo de la calle Industria, 111 años"www.fcbarcelona.cat (স্পেনীয় ভাষায়)। ১৪ মার্চ ২০২০। ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  4. "Ein Hauch Barça in Aussersihl"। ২১ জানুয়ারি ২০১৬। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২২ – www.tagesanzeiger.ch-এর মাধ্যমে। 
  5. "Aus der Schweiz"। Radfahrer-Zeitung। ২৫ আগস্ট ১৮৯৩। পৃষ্ঠা 352। 
  6. "Joan Gamper, FC Barcelona founder and first reporter"www.fcbarcelona.com। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  7. Böni, Nadine (১২ জুলাই ২০১২)। "Fussball-Historie - Hat Hans Gamper bei der Gründung des FC Barcelona gar nicht an Basel gedacht?"bz - Zeitung für die Region Basel। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  8. "Leichtathletik: Beim FCZ seit 1896"। ২ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. "1899 -1909. Foundation and survival"www.fcbarcelona.com। ১৩ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  10. "Hans 'Joan'max Gamper Haessig stats"players.fcbarcelona.com। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  11. "Joan Gamper o Narciso Masferrer: ¿Quién es el verdadero fundador del Barça?"www.mundiario.com (স্পেনীয় ভাষায়)। ৭ মে ২০১৩। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  12. Ball, Phil p. 89
  13. "Los orígenes de las camisetas rojas y azules del FC Barcelona"। El Universo। ২৩ এপ্রিল ২০২০। ৩০ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  14. "Barcelona 0–1 Team Anglès"La Vanguardia। ৯ ডিসেম্বর ১৮৯৯। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  15. "Primera edición de la Copa Macaya Enero-Abril 1901" (স্পেনীয় ভাষায়)। CIHEFE। ১ জুন ২০১৪। ১৮ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২২ 
  16. "FC Barcelona - Madrid FC (3 - 1) 13/05/1902"www.bdfutbol.com। ১০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  17. "Spain - Cup 1902"RSSSF। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০০। ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২২ 
  18. "Historia del FC Barcelona, Web de los Culés"www.webdelcule.com (স্পেনীয় ভাষায়)। ৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  19. 100 años de la primera piedra del estadio de Les Corts ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ মার্চ ২০২২ তারিখে on Mundo Deportivo
  20. Frederic Porta (৩১ মে ২০১৯)। "La 'Edad de Oro' del Barça llega a su centenario"www.elperiodico.com (স্পেনীয় ভাষায়)। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ <
  21. Loana Viera (১৫ আগস্ট ২০১৮)। "Muerte tabú: la historia del suicidio "escondido" de Joan Gamper, el fundador del Barcelona" (স্পেনীয় ভাষায়)। Infobae। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  22. "A history of indifference"El Mundo (স্পেনীয় ভাষায়)। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০২। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  23. "Joan Gamper: El 'shock' del suicidio del fundador del Barça" (স্পেনীয় ভাষায়)। Mundo Deportivo। ৩১ জুলাই ২০২০। ১১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  24. duerst.ch, Webmaster। "Gang dur Alt-Züri: Die Gamperstrasse"alt-zueri.ch (জার্মান ভাষায়)। ১৯ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]