বিষয়বস্তুতে চলুন

নিজামুদ্দীন আউলিয়া লিপু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিজামুদ্দীন আউলিয়া লিপু
নিজামুদ্দিন আউলিয়া
জন্ম
নিজামুদ্দিন আউলিয়া

(1968-10-01) ১ অক্টোবর ১৯৬৮ (বয়স ৫৫)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বআমেরিকান
কর্মজীবন১৯৯৪-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীদীপা আউলিয়া
সন্তান

নিজামুদ্দীন আউলিয়া লিপু যিনি লিপু নামে সমধিক পরিচিত, একজন বাংলাদেশী মোটর গাড়ি বিশেষজ্ঞ ও ডিজাইনার এবং কোচ বিল্ডার। লিপু আলোচিত হয়ে উঠেন সাধারণ পুরানো গাড়ি ভেঙ্গে নতুন স্পোর্টস কার প্রস্তুত করার দক্ষতার জন্য।

জন্ম ও গাড়ির জাদুকর হয়ে উঠার পিছনের কাহিনী[সম্পাদনা]

নিজামুদ্দীন আউলিয়া লিপু ১৯৬৮ সালে ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে ঢাকায়। ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারের সঙ্গে চলে যান সৌদি আরবে। সৌদি আরবে থাকাকালীন ১৬ বছর বয়সে লিপু তার জীবনের প্রথম মোটর গাড়ি প্রদর্শনী দেখেন। এই প্রদর্শনীতে ছিল বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের গাড়ি। সবগুলো গাড়ির মধ্যে লিপুর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল স্পোর্টস কারগুলো। বিশেষ করে 'ফেরারি' ব্র্যান্ডের চোখ ধাঁধানো গাড়িগুলো তার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। কিন্তু স্পোর্টস কারগুলোর দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। সেই মোটর গাড়ি মেলা থেকে তার বাবা তাকে একটি মাজদা ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। তবে লিপুর স্পোর্টস কারের প্রতি দুর্বলতা তাতে কমে নি। নিজের সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন ১৯৮৯ সালে সাধারণ একটি সিডান কার ভেঙে 'ল্যাম্বর্গিনি কাউনটেচ' তৈরি করার মাধ্যমে!

পেশাগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৮৯ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে লিপু লিমো-বিল (Leemo-bil) নামের একটি গাড়ি তৈরি করে ফেলেন! অথচ তখন পর্যন্ত তিনি জানতেন না কীভাবে একটি গাড়ির বডি ওয়ার্ক অথবা পেইন্টের কাজটি করতে হয়! গাড়িটি ডিজাইন করার জন্য লিপুর একমাত্র অবলম্বন ছিল শুধুমাত্র ল্যাম্বর্গিনি কাউনটেচের একটি পোস্টার!

২০০০ সালে লিপু ঢাকায় তার গাড়ি প্রস্তুত করার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই সময় তিনি লিপু (Leepu) নামের একটি গাড়ি প্রস্তুত করেন। এবারের গাড়িটি ছিল ল্যাম্বর্গিনি ডিয়াবলোর অনুকরণে তৈরি করা। ২৫০০ পাউন্ডের বিনিময়ে তিনি একটি ডাইহাটসু চিউরাডকে ভেঙ্গে লিপু-মোবাইল নামের একটি গাড়ি প্রস্তুত করেন। কিছুদিনের মধ্যে লিপু পরপর কয়েকটি গাড়িকে জোড়া লাগিয়ে একটি ২২ ফিট লম্বা লিমোজিনও তৈরি করে ফেলেন! লিমোজিনটি তৈরি করার সময় তিনি প্রায়শই ধোলাইখালে অবস্থিত গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান গুলোতে যেতেন। এই আসা যাওয়ার ফলে লিপুর তৈরি লিমোজিনটি ধোলাইখালের ব্যবসায়িদের কাছে ভুল করে লিপুজিন নামে পরিচিতি পেয়ে যায়। লিমোজিনের নকল এই গাড়িটি ছিল ২.৮ লিটারের একটি ডিজেল ইঞ্জিন চালিত। লিপুর নিজের হিসেব মতে এই গাড়িটির বাজার মুল্য ছিল পঞ্চাশ হাজার ডলারেরও বেশি।

লিপু তার ব্যক্তিগত ফ্যাক্টরিতে ৪ জন সহকারী মেকানিককে নিয়ে কাজ করেন। এখানে তিনি পুরনো মরচে পড়া টয়োটা আর হোন্ডা গাড়ির বডি কাটছাঁট করে গাড়ি গুলোকে ফেরারি ও ল্যাম্বর্গিনির মত দামি ও বিলাসবহুল স্পোর্টস কারে রূপান্তর করেন। এই ধরনের গাড়ি গুলোকে বলা হয় ইমিটেশন কার। সাধারণত যেসব গাড়ি ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন হয় না কিন্তু ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত গাড়ির অনুকরণে প্রস্তুত করা হয় সেইসব গাড়িকে ইমিটেশন গাড়ি বলা হয়। লিপু তার গাড়ি গুলোর বডি প্রস্তুত করতে যেসব ধাতব শিট ব্যবহার করেন সেইসব শিট সাধারণত রিকশা কিংবা বাইসাইকেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

উচ্চশিক্ষা[সম্পাদনা]

লিপু অটোমোবাইল প্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষা নেয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানস্থ জেনারেল মোটরস ইনস্টিটিউটে। কিন্তু প্রচুর তত্ত্বীয় শিক্ষা ও টেকনিকাল কাজের চাপে অচিরেই হাল ছেড়ে দেন। সেখানকার পড়াশোনা শেষ না করেই চালু করেন নিজের একটি ওয়ার্কশপ। এই ওয়ার্কশপ চালালেন টানা তিন বছর। তারপর চলে এলেন বাংলাদেশে। দেশে এসে তিনি লোকজনের পছন্দমাফিক গাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করলেন। এই কাজে তিনি ব্যবহার করতেন জাপানি ডাইহাটসু ও টয়োটা গাড়ি।