ব্যবহারকারী:Mohammad Gias Uddin1

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ব্রিটিশরা প্রায় ২০০ শত বছর ভারতবর্ষকে শাসন-শোষণের পর ১৯৪৭ সালে ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগষ্ট ভারত ইউনিয়ন নামে দুটি ডোমেনিয়ন/স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। এর পর শুরু হয় ভাষা নিয়ে নানা প্রসঙ্গ। নতুন রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ভাষা কী হবে এই নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬.৪ শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলাউর্দু ছিল পাকিস্তানের মাত্র ৩.২৭ শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা। পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের মুখের ভাষা বাংলা হওয়া স্বর্থেও ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সুপারিশ করেন। স্বাভাবিকভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। তারই প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ১৯৪৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর "তমদ্দুন মজলিস" নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে তীব্র প্রতিবাদ করেন।

এই দিকে ১৯৪৮ সালে ২৪ মার্চ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ আবার জোর দিয়ে বলেন--"Urdu and Urdu shall be the state language of Pakistan" (উর্দু এবং শুধু উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা) তার এ বক্তব্যে সমাবর্তন সভায় উপস্থিত ছাত্ররা "না" "না" বলে প্রতিবাদ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ এবং বুদ্ধিজীবী মহল ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাই পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯৪৮ সালে ১৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ছাত্র অসন্তোষের মুখে ছাত্র নেতাদের সাথে ৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

১৯৫২ সালে ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ঘোষণা করেন "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"। অতঃপর শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে বলে স্থির করা হয়।

১৯৫২ সালে ১৬ ডিসেম্বর "রাষ্ট্রভাষা বাংলা" ও "রাজবন্দীদের মুক্তির" দাবিতে কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দীন আহমদ আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।

সরকার ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে ২১ তারিখ ১৪৪ ধারা জারি করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই প্রতিফলন হিসেবে ছাত্র সমাজ ছোট ছোট দল নিয়ে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" স্লোগান দিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে।

আন্দোলনরত ছাত্রের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদনে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং এক পর্যায়ে গুলি চালায়। নিজের মাতৃভাষা রক্ষার্থে বরকত, সালাম, আব্দুল জব্বার ও রফিকসহ আরো অনেকই জীবন বিসর্জন দেন। অকাতরে বিলিয়ে দেয় বুকের তাজা রক্ত। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আমার ভাইয়ের রক্ত নির্মম ভাবে শুষে নেয়। তৈরী করে নতুন কালো অধ্যায়। পৃথিবীতে বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন।

২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশ বিক্ষোভে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারী ছাত্র-জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং মিছিলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২৩ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের শহিদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে ছাত্ররা প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ করে। শেষ পর্যায়ে তীব্র আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ভাষা দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাঙালির কাছে ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তখন থেকেই এ দিন শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৯৯ সালে দুই প্রবাসী বাঙালি "ভাষা শহিদ দিবস" কে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের ইউনেস্কো সংস্থার কাছে প্রস্তাব করেন। একই বছর ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারী "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে প্রতি বছর পৃথিবীর প্রত্যেক দেশ "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" পালন করে। এইটি বাঙালির বড় অর্জন।