মোহাম্মদ হোসেন
মোঃ হোসাইন কাদির গাজী (জন্ম: ২০ মে ২০০১ - বর্তমান)
জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
মোহাম্মদ হোসেনের পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ডাকঘরঃআমতলী বাজার এর ফাসিয়াতলা গ্রামে। তার বাবার নাম মো. তাহের আলী খান এবং মায়ের নাম গোলাপজান বেগম। তার স্ত্রী তিনজন,প্রথম স্ত্রীর নাম মালেকা বেগম(মৃত),দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম শামসুননাহার বেগম(মৃত)৷তৃতীয় স্ত্রীর নাম জিন্নাত আরা(জীবিত)। তার তিন স্ত্রীর ছয় মেয়ে ও ছয় ছেলে।
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। মোহাম্মদ হোসেন চাকরি করতেন ই.পি.আর এ এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে বি.ডি.আর এ । ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা উইংয়ের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গঙ্গাসাগর ও তালশহরে। চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর সেনা সমন্বয়ে গড়া মুক্তিযোদ্ধাদের এই দল। এ অবস্থানে যাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ না করতে পারে, সে জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি উপদল অগ্রবর্তী দল হিসেবে অবস্থান নেয় দরুইন গ্রামে। মো. হোসেন (মোহাম্মদ হোসেন) ছিলেন একটি উপদলের নেতৃত্বে। অপর উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন মোস্তফা কামাল (বীরশ্রেষ্ঠ)। ১৮ এপ্রিল সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওই এলাকায় উপস্থিত হয়। তারা দূর থেকে গোলাগুলি শুরু করে। সেদিন আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রথমে দক্ষিণ দিকে অবস্থান নিয়ে আক্রমণের ব্যাপক মহড়া প্রদর্শন করে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেন যে মোগড়াবাজার ও গঙ্গাসাগরেই পাকিস্তানিরা আক্রমণ করবে। এ জন্য তারা মূল শক্তি সে দিকেই বেশি নিয়োজিত করে আক্রমণ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেন। পাকিস্তানিরা প্রকৃত আক্রমণ শুরু করে পশ্চিম দিক অর্থাৎ দরুইনের দিক দিয়ে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাদের এই বিভ্রান্তি ও বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানিরা দ্রুত দরুইন গ্রামের খুব কাছে পৌঁছে যায়। মো. হোসেন ও মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানিদের অপ্রত্যাশিত ওই আক্রমণ প্রতিহত করেন। দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দরুইন গ্রামের দিকে আগত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই দলটি ছিল বেশ বড় ও বেপরোয়া। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। সংখ্যানুপাতে মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তারা ছিল অনেক বেশি। পাকিস্তানিদের কমান্ডো স্টাইলের প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নিজ অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। মো. হোসেন ও মোস্তফা কামাল এতে মনোবল হারাননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই অব্যাহত রাখেন। কিন্তু একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের একাংশ তাদের পেছনে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। ফলে তারা প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে অর্থাৎ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন। এ অবস্থায় তাদের পশ্চাদপসরণ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। কাভারিং ফায়ারের ছত্রছায়ায় মো. হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে নিরাপদেই পশ্চাদপসরণ করেন। অপর উপদলের মুক্তিযোদ্ধারাও পশ্চাদপসরণ করেন। কিন্তু ওই দলের দলনেতা মোস্তফা কামাল কাভারিং ফায়ার দেওয়ার সময় পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে শহীদ হন। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে চারজন শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। [১]
পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]
- সিতারা-য়ে-হার্ব
- তামশা-য়ে-জং
- জামহুরিয়া ইসলামিয়া
- রণ তারকা পদক
- সমর পদক
- মুক্তি তারকা
- জয় পদক
- সংবিধান পদক
- বীর প্রতীক
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩১২। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা[সম্পাদনা]
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।