বিষয়বস্তুতে চলুন

সতু সেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সত্যেন্দ্রনাথ সেন
সতু সেন
সতু সেন
জন্ম(১৯০২-০৬-০৪)৪ জুন ১৯০২
মৃত্যু৭ আগস্ট ১৯৭১(1971-08-07) (বয়স ৬৯)
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণরঙ্গমঞ্চ ও শিল্প নির্দেশক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক
পিতা-মাতাউপেন্দ্রনাথ সেন (পিতা)
রাইকামিনী সেন (মাতা)

সতু সেন (৪ জুন ১৯০২ – ৭ অগাষ্ট ১৯৭১)[১] বিংশ শতাব্দীর তিনের দশকে বাংলা রঙ্গালয়ে মঞ্চ নির্মাণ ও আলোক প্রয়োগ কলার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে নিঃশংসয়ে অন্যতম পথিকৃত ছিলেন সতু সেন।

বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়ের প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৭২ সালে। সুদীর্ঘ ৫৯ বছর রঙ্গমঞ্চের মঞ্চরীতি ও আলোক সম্পাতের যে ব্যবস্থা ছিল, বিদেশ থেকে শিক্ষালাভ করে দেশে ফিরে এসে সতু সেন তার আমূল পরিবর্তন করেন। এর পাশাপাশি নাট্য নির্দেশক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়ে প্রায় ৩৪ টি নাটকে শিল্প নির্দেশনা, আলোক সম্পাত কিংবা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। সেই সঙ্গে ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে তিনি পরিচালনা করেন সাতটি বাংলা চলচ্চিত্র। তার কর্ম জীবন শুরু হয়েছিল আমেরিকার ‘ল্যাবরেটারি থিয়েটার’এ ১৯২৫ সালে। আমেরিকার ‘কার্ণেগি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’তে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি না হয়ে তিনি ওই ইনস্টিটিউটেই নাটক ও নাট্যমঞ্চ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তারপর ১৯২৬ সালে কার্ণেগি ইনস্টিটিউট ছেড়ে আমেরিকান ল্যাবরেটারি থিয়েটারে ভর্তি হন। রিচার্ড বলিস্লাভস্কির জুনিয়ার অ্যাপ্রেন্টিস আর নর্মান বেলগেড্ডেস-এর সহকারী হিসেবে মঞ্চ নাটকে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯২৭ এ সহকারী টেকনিকাল পদে উন্নিত হন এবং ওই বছরেই সহকারী পরিচালকের পদ লাভ করেন। ১৯২৮ সালের প্রথম দিকে তিনি ল্যাব্রেটারি থিয়েটারের টেকনিকাল ডিরেক্টর হন। এরপর ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান হেগেনের সঙ্গে উডস্টক হিলে উডস্টক প্লে হাউস নামে একটি নাট্যশালা গড়ে তোলেন। ১৯৩১ সালে তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। শিশির কুমার ভাদুড়ির সঙ্গে তিনি বাংলার রঙ্গালয়ে শিল্প নির্দেশনা ও আলোক সম্পাতের কাজ শুরু করেন। এরপর শুধু শিল্প নির্দেশনার গন্ডিতে আবদ্ধ থাকলেন না। একের পর এক মঞ্চ সফল নাটকের পরিচালক হিসেবে তাঁকে দেখা যেতে লাগলো। তাঁর পরিচালিত নাটকগুলোর মধ্যে ‘পথের সাথী(১৯৩৫)’, ‘দুই পুরুষ(১৯৩৯)’, ‘কামাল আতাতুর্ক’, ‘পথের দাবী(১৯৩৯)’ বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে ‘রঙমহল’ থিয়েটারে ভারতের প্রথম ঘূর্নায়মান মঞ্চ নির্মান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এবং ‘মহানিশা’ নাটকটি পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলা তথা ভারতীয় নাটকের ইতিহাসে এক মাইল ফলক প্রতিষ্ঠা করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে ১৯৩৬ সালে ‘পণ্ডিত মশাই’, ১৯৩৮-এ ‘চোখের বালি’ উল্লেখযোগ্যতার দাবি রাখে। ১৯৩১ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে তিনি রঙমহল, নাট্যনিকেতন, নাট্যভারতী, মিনার্ভা, স্টার, নিউ এম্পায়ার, করিন্থিয়ান প্রভৃতি রঙ্গমঞ্চে ধারাবাহিকভাবে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যান। এরপর ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ তিনি পশ্চিমবঙ্গ সঙ্গীত নৃত্য নাটক অকাদেমীর অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত তিনি ন্যাশানাল স্কুল অব ড্রামা ও এশিয়ান থিয়েটারের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

ছাত্রজীবন[সম্পাদনা]

১৯০২ সালের ৭ই জুন তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বরিশাল শহরে সতু সেনের জন্ম। তার বাবা উপেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ছিলেন পেশায় দারোগা। মা রাইকামিনী সেনগুপ্ত ছিলেন একেবারেই নিপাট বাঙালী গৃহবধূ। ছাত্রাবস্থায় সতু সেন প্রথমে বরিশাল জিলা স্কুলে ক্লাশ এইট পর্যন্ত পড়াশনা করেন। পরবর্তীতে তার বাবা কুমিল্লায় বদলি হয়ে যাবার পর তিনি কুমিল্লা জেলা স্কুলে ভর্তি হন আর সেখান থেকেই ১৯২০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর ১৯২২-এ বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই.এস.সি পাশ করে বারানসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে যান। ১৯২৫ সালে আমেরিকার কার্নে্গি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বৃত্তি পেয়ে বিদেশ যাত্রা করেন। ছোটবেলা থেকেই মঞ্চ নাটকের প্রতি এক অদম্য আকর্ষণ ছিল সতু সেনের। পাড়া গাঁয়ে মাচা বেঁধে নাটকে অভিনয় করতেন। কলকাতার কলেজে পড়তে এসে সেই আকর্ষণটা ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়েছিল। অভিনয় না করলেও নাটক দেখায় কোন খামতি ছিল না। আর নাটকের প্রতি সেই ভালোবাসাতেই তিনি সারাজীবন নিমজ্জিত ছিলেন।

প্রবাস জীবন[সম্পাদনা]

১৯২৫ সালে বারানসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া শেষ করে বৃত্তি পেয়ে আমেরিকার কার্ণেগি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়ার জন্য বিদেশ পাড়ি দেন। আমেরিকার পথে প্যারিসে তার সংগে পরিচয় হয় ভারত থেকে যাওয়া মস্কোর বাগেশ্বরী অধ্যাপক জনাব হাসান শহীদ সারোয়ার্দির। নাটক এবং নাট্যসাহিত্যর প্রতি অসীম আগ্রহ নিয়ে জনাব সারওয়ার্দি রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি পাশ্চাত্য দেশ ছুটে বেরিয়েছেন। এহেন মানুষটা যখন জানতে পারলেন নাটকের প্রতি সতু সেনের আগ্রহ এবং ভালোবাসার কথা তিনি কাল বিলম্ব না করে সদ্য পরিচিত এই বাঙালী ছাত্রটিকে নাটকের কলাকৌশল শেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করলেন। তারই প্রবল উৎসাহে এবং সাহায্যে সতু সেন কার্ণেগি ইনস্টিটিউটে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উচ্চ শিক্ষা পরিত্যাগ করে নিউইয়র্কে বিশ্ববিখ্যাত নাট্যপরিচালক বরিস স্তানিস্লাভস্কির ছাত্র রিচার্ড বলিস্লাভস্কির অধীনে দি থিয়েটার আর্টস ইনস্টিটিউটে নাট্যপ্রয়োগকলা নিয়ে ভর্তি হন এবং আমেরিকান ল্যাবরেটারি থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন। যদিও থিয়েটার আর্টসে যোগদানের পুর্বে মাস আষ্টেক কার্ণেগি ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রনিক্সের পরিবর্তে নাট্য ও নাট্যমঞ্চ কারিগরি বিভাগে ভর্তি হন। এরপর থিয়েটার আর্টস ইনস্টিটিউটে সতু সেন নাট্যতত্ব ও প্রয়োগকলার পাশাপাশি মঞ্চ ও আলোক সম্পাত নিয়ে পড়াশনা শুরু করেন। আমেরিকান ল্যাবরেটারি থিয়েটারে কাজ শুরু করার মাস আটেকের মধ্যে ১৯২৬ এর জুন মাসে তার কর্ম দক্ষতার জন্য বলিস্লাভস্কি সতু সেনকে তার জুনিয়র অ্যাপ্রেন্টিস হিসেবে নিযুক্ত করেন। সেই সঙ্গে মঞ্চসজ্জা ও নির্মানে নর্মান বেলগেড্ডেস-এর সহকারী হয়ে একযোগে কাজ করতে থাকেন সতু সেন। ধীরে ধীরে নতুন ছাত্রছাত্রীদের হাতে কলমে কাজ শেখানোর অল্প বিস্তর দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। এরপর অসম্ভব পরিশ্রমী এবং প্রতিভার অধিকারী সতু সেনকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি। ১৯২৭ সালে ল্যাবরেটারি থিয়েটার কর্তৃপক্ষ তার কর্ম দক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে অন্যতম সহকারী টেকনিকাল ডিরেক্টর পদে উন্নিত করে। আর ওই বছরেই সহকারী পরিচালকের পদও লাভ করেন। এর মাঝেও থেমে থাকেনি তার পড়াশনা। নর্মান বেলগেড্ডেস-এর তত্ত্বাবধানে অধ্যয়ন চলতে থাকে আলো প্রক্ষেপনের মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি, সেট নির্মানের ডাইমেনশন বোধ, নাটকের চরিত্র অনুযায়ী মঞ্চসজ্জার প্রয়োগ ইত্যাদি। এই সময়েই থিয়েটারে সহকারী পরিচালনার পাশে বলিস্লাভস্কির পরিচালনায় ‘মিকাডো’ চলচ্চিত্রেও সতু সেন সহকারী পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। এরপর ১৯২৮ সালে তিনি সহকারী টেকনিকাল ডিরেকটার থেকে টেকনিকাল ডিরেকটার পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বেশ কিছু মঞ্চ সফল প্রযোজনা যেমন আন্তন চেকভ-এর ত্রি সিস্টার্স, আঙ্কল ভানিয়া, লিও তলস্তয়ের রেজারেকশন, ওয়ার অ্যান্ড পিস, বেলজিয়ান নাট্যকার মরিস মেটারলিঙ্কের ব্লু বার্ড, ইংরেজ নাট্যকার শেক্সপিয়ারের মিড সামার নাইটস ড্রিম, এবং ফরাসী নাট্যকার জাঁ জাক বার্নার্ড-এর দি সালকি ফায়ার নাট্যপ্রযোজনাগুলোতে প্রয়োগ প্রধানের ভুমিকা পালন করেন। এছাড়া আমেরিকার রূপক ধর্মী নাট্যকার ইউজিন ও নীলের মার্কো মিলিয়নস-এ এবং মিগুয়েল সার্ভেন্টাসের রচিত দি প্রিন্টেড বাস্ক এবং দি জেলাস ওল্ড ম্যান নাটকের মঞ্চসজ্জা ও আলোক সম্পাত করেছিলেন। এরপর গৌতম বুদ্ধের জীবনী নিয়ে ১৮৭৯ সালে ইংরেজ কবি ও সাংবাদিক স্যার এডউইন আর্নল্ডের লেখা নাটক লাইট অব এশিয়া-র প্রযোজনায় যুগ্ম পরিচালকের দায়িত্ব সামলেছেন। শুধু লাইট অব এশিয়া-ই নয় আমেরিকার ব্রডওয়ে প্রযোজনা মিঃ মানিপেনী নাটকেও বলিস্লাভস্কির সঙ্গে যুগ্ম পরিচালনায় ছিলেন সতু সেন। তারপর জনৈক ফরাসী নাট্যকারের লা বুফ এ তে সালতুয়া নাটকটি একাধারে মঞ্চসজ্জা ও পরিচালনা করেন। তারপর পরিচালনা করেন সোফক্লিসের আন্তিগোনে নাটকটি। ১৯২৮ সালে সতু সেন এবং অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান হেগেন মিলিত ভাবে আমেরিকার উডস্টক হিলসে প্রতিষ্ঠা করেন উডস্টক প্লে হাউস। গরমের ছুটির সময় সপ্তাহে চার দিন নাট্যাভিনয় প্রযোজিত হত সেখানে।

ইউরোপ ও রাশিয়া ভ্রমণ[সম্পাদনা]

১৯২৯ সালে ল্যাব্রেটারি থিয়েটার থেকে এক বছরের ছুটি নিয়ে সতু সেন বেরিয়ে পড়েন ইউরোপ যাত্রায়। প্রথমে তিনি পৌঁছোন বার্লিনে। উদ্দেশ্য বিশ্ববিখ্যাত ম্যাক্স রাইনহার্ড থিয়েটার পরিদর্শন। বার্লিনে সেই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পর তিনি চলে যান প্যারিস। সেখানে জাক কোপোরের থিয়েটার দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার। ১৯২৮, ২৯, ৩১ সালে তিনি মস্কো ভ্রমণ করেন। মস্কোর আর্ট থিয়েটার এবং বলশয় থিয়েটার দেখেছিলেন তিনি। ১৯২৯ সালে সুইটজারল্যান্ডে গিয়ে প্রবাদপ্রতীম নাট্যকার বরিস স্তানিস্লাভস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন তিনি গভীরভাবে অসুস্থ। সতু সেন ব্রিটেন শহরে গিয়েছিলেন গ্ররডন ক্রেগের কাজ দেখতে। সেখানে শুধু মঞ্চ নাটকই নয় মহড়া দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার।

পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যাবর্তন[সম্পাদনা]

সতু সেনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় শিশির কুমার ভাদুড়ির আমেরিকা সফরের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি প্রায় নিঃস্ব হয়ে যান এবং বন্ধু ক্রিশ্চিয়ান হেগেনের সহায়তায় ১৯৩১ সালে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। কাজ শুরু করেন সেই শিশির কুমার ভাদুড়ির সঙ্গেই, রঙ্গমহল থিয়েটারে বিষ্ণুপ্রিয়া নাটকের শিল্প নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়ে। মঞ্চ জীবনের আর এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয় সতু সেনের। ওই বছরের শেষভাগে তিনি নাট্যনিকেতনে পরিচালক এবং শিল্প নির্দেশক রূপে যোগদান করেন। সেখানে তার প্রথম পরিচালিত নাটক শচীন সেনগুপ্তের রচিত ঝড়ের রাতে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, ইতিপূর্বে বাংলার মঞ্চ নাটকের কোন ধরা বাঁধা সময়সীমা ছিলনা। পাঁচ-ছ ঘণ্টার আগে কোন নাটকের সমাপ্তি হতো না। ঝরের রাতে নাটক থেকে বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়ে তিনি মঞ্চ নাটককে বেঁধে দেন তিন ঘণ্টার গন্ডীর মধ্যে। এ যাবৎকাল বাংলা নাটকে ফ্লাড লাইট আর স্পট ছাড়া আলকসম্পাত বলতে কিছুই ছিলনা। এই প্রথম তার হাত ধরে বাংলা রঙ্গালয়ে মুড লাইটের প্রবর্তন ঘটে। বাংলার দর্শক সর্বপ্রথম দেখে মঞ্চের ওপর ঝড় জল আর বিদ্যুতের খেলা। এরপর ১৯৩১এর ডিসেম্বরে কাজী নজরুল ইসলাম-এর লেখা গীতিনাট্য আলেয়া মঞ্চস্থ হয় নাট্যনিকেতনে। বিদেশী অপেরার আঙ্গীকে সতু সেন এই গীতিনাট্যটিকে দর্শকের সামনে তুলে ধরেন। ১৯৩৩ সালে তিনি যোগদান করেন রঙমহল থিয়েটারে। সিন্ধুগৌরব এবং পতিব্রতা নাটক দুটির সার্থক পরিচালনার পর তিনি ঘূর্ণায়মান মঞ্চ প্রবর্তন করেন এবং সেই মঞ্চে প্রথম অভিনীত হয় 'মহানিশা' নাটকটি। এরপর রঙমহলের ঘূর্ণায়মান মঞ্চে পরপর অভিনীত হয় 'বাংলার মেয়ে' (১৯৩৪), 'নন্দরাণীর সংসার' (১৯৩৪), 'মহামায়ার চর' (১৯৩৯), 'চরিত্রহীন' (১৯৩৫), 'অশোক' (১৯৩৩) প্রভৃতি নাটক। নবিন তুরস্কের জন্মদাতা ও মহান সঙ্গগ্রামী দেশপ্রেমিক কামাল পাশার কীর্তিগাঁথা নিয়ে শচীন সেনগুপ্ত লিখে ফেলেন কামাল আতাতুর্ক। বিপুল অর্থ ব্যয় ও আড়বম্বরে নিউ এম্পায়ারে নাটকটি মঞ্চস্থ করেন সতু সেন। ১৯৩৯ সালে তার পরিচালনায় সিরাজদৌল্লা, মীরকাশেম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে পথের দাবী নাটক খুবই প্রশংসিত হয়। ১৯৪২ সালে তিনি পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন নাট্যভারতী রঙ্গমঞ্চে। মঞ্চস্থ হয় চন্দ্রশেখর, দুই পুরুষ, ধাত্রীপান্না। ১৯৫৭ সালে তার পরিচালনায় শেষ প্রযজনা কর্ণ কুন্তী কৃষ্ণ মিনার্ভায় অভিনীত হয়।

চলচ্চিত্র পরিচালনা[সম্পাদনা]

১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে সতু সেন সাতটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। প্রথম ছবি মন্ত্রশক্তি। ১৯৩৬ সালে তার পরিচালনায় পণ্ডিত মশাই চলচ্চিত্রটি সর্ব শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র রূপে সর্বজনের অভিনন্দন পেয়েছিল। ১৯৩৭ সালে ইন্সপেক্টর বা ধূমকেতু ছবিটিতে প্রথম একই ব্যক্তি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৩৮ সালে নির্মান করেন চলচ্চিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস চোখের বালি। সেই সূত্রে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় কবিগুরুর। চোখের বালি দেখে তিনি ভূয়সী প্রশংসা ও অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সতু সেনকে। ওঁর পরিচালনায় শেষ ছবি 'স্বামী-স্ত্রী'। মুক্তি পায় ১৯৪০ সালে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৭৬০,৭৬১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬