সিরীয় বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন ও গবেষণা কেন্দ্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সিরীয় বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন ও গবেষণা কেন্দ্র বা সায়েন্টিফিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (এসএসআরসি) হলো সিরিয়ার একটি সরকারি সংস্থা যার লক্ষ্য হল দেশজুড়ে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সমন্বয় করা।[১][২] এটি ফরাসি ভাষায় Centre D'Etudes et de Recherches Scientifiques (CERS) নামেই বেশি পরিচিত[৩][১]। এটি সিরিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, বিশেষ করে সরকারি সংস্থাগুলোর কম্পিউটারাইজেশনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ করে।[২] সিরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাইতেও এর কাছে ভালো প্রযুক্তিগত ক্ষমতা এবং সরঞ্জাম রয়েছে বলে মনে করা হয়।[১] জেন্'স ইনফরমেশন গ্রুপ ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস এবং অন্যান্য বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এটি পারমাণবিক, জৈবিক, রাসায়নিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পাশাপাশি প্রচলিত সামরিক অস্ত্র সহ বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র সংক্রান্ত গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য কাজ করে।[১][২]

অধ্যয়ন ও গবেষণা কেন্দ্রটি মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন মহাপরিচালক দ্বারা পরিচালিত হয়, যিনি সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ। এর বেশিরভাগ গবেষণা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচলান হয়ে থাকে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য। ১৯৭০ সাল থেকে কেন্দ্রটি সিরিয়ায় বেসামরিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের জন্যও কাজ করছে, এবং এই ভিত্তিতেই এটি পশ্চিমা রাসায়নিক কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ১৯৭১ সালে বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন ও গবেষণা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন পারমাণবিক পদার্থবিদ আবদুল্লাহ ওয়াতিক শহীদ, যিনি ১৯৬৭ সালে উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী হয়েছিলেন। কেন্দ্রটি দৃশ্যতই একটি বেসামরিক সংস্থা ছিল কিন্তু মহাপরিচালক শহীদের লক্ষ্য ছিল অস্ত্র তৈরি করা। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি হাফেজ আল-আসাদ এসএসআরসি এবং সিরিয়ান সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক অনুমোদন করেন। এসএসআরসি তখন সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র উন্নয়ন ও বর্ধনের কাজে প্রধান সংস্থা হয়ে ওঠে। যদিও এটি স্পষ্টতই বেসামরিক ছিল, জিয়াউদ্দিন সরদারের ১৯৮২ সালের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন দ্য মিডল ইস্ট বইয়ে বলা হয়েছে যে এসএসআরসি "সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত, এবং সামরিক গবেষণা পরিচালনা করে।"[৫]

সামরিক কার্যক্রম[সম্পাদনা]

রাসায়নিক অস্ত্রের উন্নয়ন[সম্পাদনা]

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৩ সালের আগস্টে, এসএসআরসি ঘৌতা রাসায়নিক হামলায় ব্যবহৃত রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত করেছিল যা সিরীয় গৃহযুদ্ধে শত শত বেসামরিক সিরীয় নাগরিককে হত্যা করেছিল।[৬]

ফরাসি গোয়েন্দাদের মতে, এসএসআরসি যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বিষাক্ত এজেন্ট উৎপাদনের জন্য দায়ী, "ব্রাঞ্চ ৪৫০" কে রাসায়নিক দ্রব্যে যুদ্ধাস্ত্র ভরাট করার জন্য দায়ী এবং সেইসাথে রাসায়নিক এজেন্ট মজুদ করা স্থানগুলোর নিরাপত্তার জন্য দায়ী। [৭]

নিষেধাজ্ঞা[সম্পাদনা]

সামরিক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

২০১০ সালে, ইসরায়েলের কাউন্টার-টেরোরিজম ব্যুরোর পরিচালক নিতজান নুরিয়েল বলেছিলেন যে এসএসআরসি হামাস এবং হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সিরিয়া সরকারকে সতর্ক করা যে এসএসআরসি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখলে তা ধ্বংস করা হবে৷[৮]

২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারিতে, জামরায়ায় অবস্থিত এসএসআরসি-এর একটি স্থাপনা একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ধারণা করা হয় এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল এসএসআরসি থেকে লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহর কাছে উন্নত বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বহনকারী একটি বহর।[৯][১০][১১]

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী মাসয়াফের কাছে একটি এসএসআরসি সামরিক গবেষণা কেন্দ্রে বোমা হামলা করেছিল, সম্ভবত একটি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা লক্ষ্য করে এই হামলা হয়েছিল। হামলায় দুই সিরীয় সৈন্য নিহত হয় এবং স্থাপনাটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ভিতরে সঞ্চিত অনেক অস্ত্র ধ্বংস হয়।[১২] সিরিয়ার গণমাধ্যম ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আরেকটি ইসরায়েলি হামলার খবর দিয়েছে।[১৩]

২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিলে, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করে রাসায়নিক অস্ত্র মজুদের স্থানগুলোতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় দামেস্কের বারজাহে এসএসআরসির বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। বড় বড় কমপ্লেক্সবিশিষ্ট অন্যান্য ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।[১৪]

২০১৮ সালের আগস্টে এসএসআরসি মাসিয়াফের তৎকালীন প্রধান আজিজ আজবার ইসরায়েলের একটি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন।[১৫]

২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারিতে তুর্কি ড্রোন হামলা হয় আস-সাফিরাতে এসএসআরসি স্থলে। [১৬] একজন তুর্কি কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে স্থানটি রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। [১৭]

২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বরে মাসিয়াফের কাছে একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় চারটি ক্ষেপণাস্ত্র উত্পাদন কেন্দ্র ধ্বংস হয়।[১৮] হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছে এবং ইরানি মিলিশিয়াদের ডিপো ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে বলে জানা গেছে।[১৯]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Scientific Studies and Research Center"। Nuclear Threat Initiative। ১৭ আগস্ট ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৩ 
  2. Special Weapons Agencies. GlobalSecurity. 24 July 2011.
  3. Lappin, Yaakov (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Making sense of the air strike in Syria"। The Jewish Institute for National Security Affairs। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৩ 
  4. "Facilities" 
  5. Shoham, Dany (২০০২)। "Guile, gas and germs: Syria's ultimate weapons"। Middle East Forum: 53–61। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৩ 
  6. "Obama Says Syrian Chemical Arms Use a Challenge to Security"। ৩০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৮ 
  7. Willsher, Kim (২ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Syria crisis: French intelligence dossier blames Assad for chemical attack"The Guardian। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  8. Lappin, Yaakov (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "Syria arms 'institute' must be stopped, official says"Jerusalem Post। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৩ 
  9. Assad fumes as Israel admits Syria air strike. The Express Tribune
  10. Israeli raid in Syria reportedly damaged research site. The Times Of Israel
  11. Israeli strike into Syria said to damage research site. New York Times. 3 February 2013
  12. "Israeli jets said to hit chemical weapons, missile site in Syria"The Times of Israel। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৮ 
  13. "Syrian media says Israel struck near Damascus for second time in days"Jerusalem Post। ডিসেম্বর ৫, ২০১৭। 
  14. O'Connor, Sean (১৬ এপ্রিল ২০১৮)। "Western allies target Syrian assets"Jane's 360। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৮ 
  15. "Top Middle East intel official says Mossad behind killing of Syrian rocket chief"www.timesofisrael.com 
  16. "45 قتيلا من قوات النظام بقصف طائرات مسيرة وحربية وقصف مدفعي تركي.. وصواريخ أرض-أرض تستهدف ريف حلب"। SOHR। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০২১ 
  17. "Syrian chemical warfare facility destroyed in overnight Turkish strike: report"। I24। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০২১ 
  18. "Satellite images show airstrike damage to weapons facilities in Syria"www.timesofisrael.com 
  19. "At Least Six Killed by Israeli Missile Strikes in Syria, Monitor Says" – Haaretz-এর মাধ্যমে।