সৈয়দ কামরুল ইসলাম সালেহ উদ্দিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ব্যারিস্টার
সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন
পাকিস্তান জাতীয় সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ – ৫ মার্চ ১৯৭১
ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ মার্চ ১৯৭৩ – ৬ নভেম্বর ১৯৭৬
পূর্বসূরীআব্দুস সালাম খান
উত্তরসূরীসিরাজুল ইসলাম মৃধা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২ জুলাই ১৯৩৭
গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৪ মে ১৯৮৩
পিজি হাসপাতাল
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি

সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন (জংগু) (২ জুলাই ১৯৩৭-২৪ মে ১৯৮৩) ছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কারাবরণকারী ভাষা সৈনিক, ব্রিটিশ সিভিল সাভিস সদস্য, ব্রিটিশ হাইকোর্টের আইনজীবী, ব্রিটিশ কুইন্স কাউন্সিলর(কিউসি), বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট, বাংলাদেশ জাস্টিস পাটি'র প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন এমএনএ (পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগ,ততকালীন ফরিদপুর -২), বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য (এমসিএ,আওয়ামী লীগ, ১৯৭২) ও জাতীয় সংসদ সদস্য (এমপি, ফরিদপুর-৩, বর্তমান ফরিদপুর-১ আসন মধুখালী-বোয়ালমারী-আলফাডাঙা) ।[১]

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন (জংগু) ২রা জুলাই ১৯৩৭ সালে (ম্যাট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী ৩রা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯) বর্তমান গোপালগঞ্জের জেলার টিটা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। উনার পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ও মাতা সালেহা খাতুন। সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের নিজ গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার বনমালিদিয়া গ্রামে।

সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন এর পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম (ইপিসিএস, টিকিউএ) ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বংগীয় সরকারি প্রশাসনের অফিসার হিসাবে ১৯৩৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ভাইবোনের মধ্যে সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন সবার বড়।

শিক্ষা, রাজনৈতিক ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন বরিশালের ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লোবী মনোরমা বসু মাসিমার ছত্রছায়ায় শৈশব থেকে কমুনিস্ট পাটির সদস্য হিসাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামীল হন। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি বরিশাল বি.এম.ইন্সটিটিউটে ১৯৫২ সালের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষাথী ছিলেন, এই সময় ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে বরিশাল শহরে এক প্রতিবাদ মিছিল থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগার প্রেরণ করে। সেখান থেকে তিনি ১৯৫৩ সালে বরিশাল বিএম ইনস্টিটিউট (বর্তমানে বিএম কলেজ) এর ছাত্র হিসাবে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।

১৯৫৬ সালে তিনি কারাগার থেকে বাগেরহাট পিসি কলেজ এর ছাত্র হিসাবে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৯ সালে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর তিনি পুরানো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কে,এল,জুবিলী স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। তিনি চাঁদপুরের একটি বেসরকারি কলেজে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন এবং বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানি ফাইজারের মেডিকেল প্রতিনিধি হিসাবে কিছুকাল কাজ করেন।

১৯৬৩ সালে আইনশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডে যান। ১৯৬৮ সালে লন্ডনের ইনার টেম্পল থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। তিনি ব্রিটিশ হাইকোর্টের কুইন্স বেঞ্চ ডিভিশনে কিছুদিন প্রাক্টিস করেন। দেশে ফিরে তিনি ততকালীন ইস্ট পাকিস্তান হাইকোর্টে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন।

ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ব্রিটিশ ভারতের ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসাবে শৈশব থেকে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।

শৈশবে বরিশালে থাকাকালীন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী নারীনেত্রী মনোরমা বসু মাসিমার ছত্রচ্ছায়ায় তিনি রাজনীতির দীক্ষা নেন। তিনি ১৯৫৩-৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বরিশাল শাখার কনভেনার ছিলেন। ১৯৫৩-৪ সালে বরিশাল শহর যুবলীগের সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন।

ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ১৯৫৭-৫৮ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৬-৫৮ সালে খুলনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন।

ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ১৯৬৭ সালে লন্ডনে ৬ দফা আন্দোলন কমিটির চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করেন। ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ১৯৬৮-৬৯ সালে শেখ মুজিব ডিফেন্স তহবিলের লন্ডনস্থ কনভেনরের দ্বায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাজ্যে পুর্ববাংলার ছাত্রদের সাথে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেন। প্রবাসী বাঙ্গালি ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান ইউথ ফেডারেশন গঠন করেন।

১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত আসামি শেখ মুজিবুর রহমানকে আইনি সহায়তা দানের জন্য তিনি দি রাইটস অব ইস্ট পাকিস্তান ডিফেন্স ফ্রন্ট গঠন করে ব্রিটিশ এমপি ও কুইন্স কাউন্সিলর স্যার টমাস উইলিয়ামসকে পূর্ববাংলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। দি রাইটস অব ইস্ট পাকিস্তান ডিফেন্স ফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসাবে ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ১৯৬৮ সালের ৭ই জুলাই লন্ডনে অবস্থিত ততকালীন পাকিস্তান হাইকমিশন ভবন দখলে নেত্রীত দিয়েছিলেন।

শেখ মুজিবর রহমানের আহবানে ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ১৯৬৯ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করে ১৯৭০ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থি হয়ে ফরিদপুর-২ (বালিয়াকান্দি, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা) আসন থেকে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী পরে পিডিপি'র নেতা এডভোকেট আব্দুস সালাম খানকে পরাজিত করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। এই নিব্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১,৯৮,৬১৩ জন। ১,২৭,২৬০ জন ভোটার উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ভোট পান ১,০৬,৬৬৬।

১৯৭১ সালের ১৮ই মাচ বোয়ালমারী ডাকবাংলো মাঠে ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন লক্ষ-লক্ষ ছাত্রজনতার সম্মুখে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং ঘোষণা করেন,"আজ থেকে আমরা এই পতাকাকে স্যালুট করবো "। ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন এর আহবানে ফরিদপুরের ছাত্রজনতা ২৬শে মাচ ফরিদপুর জেলার জেলা প্রশাসক অফিস (ডিসি অফিস) ও পুলিশ সুপার অফিস (এসপি অফিস) থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করেন।সেখানে তিনি রাজনৈতিক প্রশিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য (এমসিএ) হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন এবং বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে নিজনাম স্বাক্ষর করেন।

ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ফরিদপুর-৩ (বর্তমান ফরিদপুর-১, মধুখালি-বোয়ালমারি-আলফাডাংগা) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও যুক্তফ্রন্টের প্রাক্তন মন্ত্রী আ্যডভোকেট শ্রী গৌরচন্দ্র বালাকে পরাজিত করে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়ে প্রথম জাতীয় সংসদে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী) প্রতিনিধিত্ব করেন।

ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ১৯৭৪ সালে বংগবন্ধুর আগ্রহে আন্তর্জাতিক ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)'তে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সমথর্ন জুগিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর তিনি আওয়ামী লীগ (মিজান)-এ যোগ দেন। ১৯৮০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠা করে এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ, নবারুন সংঘ, বনানী ক্লাব প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

এছাড়া ১৯৭৪ সালে ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন প্রথম জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য (এমপি) থাকাকালীন সময়ে ফরিদপুরের মধুখালিতে ফরিদপুর জেলার একমাত্র চিনিকল ফরিদপুর সুগার মিল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রাথী সিরাজ মধার কাছে সরকারের প্রশাসনের প্রভাবে পরাজিত হন।

১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ জাস্টিস পাটি'র গোড়াপত্তন করেন এবং ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ জাস্টিস পাটি আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৮৩ সালে তিনি ততকালীন সামরিকজান্তা লে.জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন এবং সামরিকজান্তার বিরাগভাজনে পরিনত হন।

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের পিতা সৈয়দ মোহম্মদ আব্দুল হালিম ছিলেন বেঙল সিভিল সার্ভিসের সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল হালিম ১৯৪৭ সালে খুলনা জেলায় সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন সময়ে তারই লেখা মেমোরেন্ডাম এর উপর ভিত্তি করে বৃহত্তর খুলনা জেলা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই কারনে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল হালিমকে টিকিউএ (তঘমায়ে কায়েদ এ আজম) খেতাব দেয়া হয়। সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল হালিম ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই খেতাব ফিরিয়ে দেন। ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিনের আদি পূর্বপুরুষ হজরত সৈয়দ শাহ হুসাইন তেগ বোরহান (র.) নিজ পুত্র হজরত শাহ সৈয়দ হাবিবউল্লাহ মদ্দানে খোদাকে (র.) এবং মিরপুরের হজরত শাহ আলী বোগদাদি (র.) সহ ৪০জ মতান্তরে ১০০ জন দরবেশের সাথে ইরাকের বাগদাদ শহর থেকে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন আলম শাহের (১৪৪৫-১৪৫১ খ্রীস্টাব্দ) দরবারে অতিথি হয়ে আসেন। সম্পর্কে হজরত সৈয়দ শাহ হুসেইন তেগবুরহান(র.) হজরত শাহ আলী বোগদাদি (র.) এর বোনজামাই ছিলেন। হজরত শাহ আলী বোগদাদি (র.) দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন আলম শাহের কন্যাকে বিবাহ করেন। দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন আলম শাহের সময় ফরিদপুরের গেরদায় হজরত শাহ আলী বোগদাদি (র.) কে লাখেরাজ জমি দান করা হয়। দিল্লির বাদশাহ আলাউদ্দিন আলম শাহ রাজধানী দিল্লি থেকে স্থানান্তর করে বদায়ূন নিয়ে যান এবং বাকি জীবন আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। ধারণা করা হয়, আলাউদ্দিন আলম শাহের রাজত্বের শেষদিকে হজরত শাহ আলী বোগদাদি(র.), হজরত সৈয়দ শাহ হুসেইন তেগবুরহানা (র.),হজরত শাহ সৈয়দ হাবিবুল্লাহ(র.) দিল্লি থেকে বর্তমান ফরিদপুর (সাবেক ফতেহাবাদ) জেলা শহরের কাছে গেরদা আসেন ধর্ম প্রচারের জন্য। গেরদায় হজরত সৈয়দ শাহ হুসাইন তেগ বোরহান (র.) এর মাজার রয়েছে। হজরত শাহ সৈয়দ হাবিবউল্লাহ(র.) বাবার আদেশে ফরিদপুরের গেরদা থেকে ১৮ মাইল দূরে মধুখালী (সাবেক ভূষনা) উপজেলার বনমালিদিয়া গ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য এসে সেখানে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেন। হজরত শাহ হাবিবুল্লাহ (র.) ছিলেন ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ শাহ আলী বোগদাদীর (র.)আপন ভাগিনা। শাহ সৈয়দ হাবিব উল্লাহর(র.) হজরত শাহ আলী বোগদাদির(র.) কন্যাকে বিবাহ করেন। হজরত শাহ হাবিবুল্লাহর মাজার মাজার ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বনমালিদিয়া গ্রামে আজতক বিদ্যমান। ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন এই সিলসিলার আওলাদ। ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিনের মাতা সালেহা খাতুন গোপালগঞ্জের টিটার ক্ষয়িষ্ণু মুসলিম জমিদার ও ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদ হোসেন খানের বড় কন্যা।

সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ১৯৬৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন খুলনার বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জের বরফা জালালপুর গ্রামের সিরাজুল হকের বড়মেয়ে দিল আফরোজ বেগম ডলির সাথে। তাদের একমাত্র পুত্র ডক্টর সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। চীনের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিআরসিসি'র আইন উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি গাজীপুর জেলায় প্রস্তাবিত বেংগল ইউনিভার্সিটির বোড অফ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান । একমাত্র কন্যা সৈয়দা ফারজানা সালেহউদ্দিন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ২৪ মে ১৯৮৩ সালে ঢাকার তৎকালিন পিজি হাসপাতাল বর্তমানে বংগবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন এর নামে তার নিজ গ্রাম ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলার বনমালিদিয়ায় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোডের আওতায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে "ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন টেকনিক্যাল কলেজ"। এছাড়া, মরহুমের নামে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় গুলশানের ১১ নম্বর রাস্তাটি " বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন সড়ক " নামকরণের প্রস্তাব ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমোদন করা হয়েছে। ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের কর্মময় জীবনের উপর ভিত্তি করে "ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন :জীবন ও রাজনীতি " নামে একটি গ্রন্থ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।