হেমচন্দ্র গুহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হেমচন্দ্র গুহ (১ জুন, ১৯০৩– ১৮ নভেম্বর, ১৯৯২) হলেন একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের একজন অন্যতম উদ্যোগী।[১]

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

হেমচন্দ্র গুহ ১৯০৩ সালে অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি উপজেলার অন্তর্গত গাভা-রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কাঁচাবালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তারাপ্রসন্ন গুহ। তাঁর পিতা ছিলেন আলেয়া গ্রামের নায়েব। পিতার কর্মস্থল আলেয়া গ্রামেই তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হেমচন্দ্র মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯১৯ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। প্রবল মেধাশক্তিসম্পন্ন হেমচন্দ্র ম্যাট্রিক পরীক্ষায় জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তি এবং স্বর্ণপদক পান। কৃষ্ণনাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের পড়া চলাকালীন তিনি গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে কলেজের পড়া ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। সেখানে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ পরিচালিত বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট-এ ভর্তি হন। অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

প্রাথমিক কর্মজীবন[সম্পাদনা]

পিতার মৃত্যুর পর তিনি অর্থকষ্টে জর্জরিত হয়ে পড়েন। এছাড়া ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে তিনি বিদেশে চাকরির সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেন। বিলেতে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির অর্থ জোগাড় করার জন্য ২০০০ টাকা যৌতুক নিয়ে বিবাহ করেন[২] এবং ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর গ্লাসগোতে একটি ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানিতে প্রায় দেড় বছর চাকরি করার পর দেশে ফেরেন।

পরবর্তী কর্মজীবন এবং কৃতিত্ব[সম্পাদনা]

প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং সমাজহিতৈষী রাসবিহারী ঘোষ মহাশয়ের বদান্যতায় কলকাতার যাদবপুরে ন্যাশনাল কাউন্সিলের একটি কলেজ স্থাপিত হয়। হেমচন্দ্র ১৯২৭ সালে এই কলেজের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হেমচন্দ্র গুহ এবং উগ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজটিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৫৫ সালে এই কলেজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৬৬–১৯৭০ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ অলঙ্কৃত করেন। ডঃ ত্রিগুণাচরণ সেনের সভাপতিত্বে দ্যা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড স্থাপিত হলে তিনি তার সেক্রেটারি নিযুক্ত হন।[৩] রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সদস্য হিসেবে তাঁর নাম উল্লেখযোগ্য। ওয়ার্ল্ড এনার্জি কনফারেন্স -এর চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিশ্বের নানা দেশে আমন্ত্রিত হন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের নাম মন ও মনীষা[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, আইএসবিএন– 81-86806-99-7
  2. দেশ: সাপ্তাহিক পত্রিকা
  3. "About Us – Jadavpur University Employees' Co-operative Credit Society Ltd." (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-০১ 
  4. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, আইএসবিএন– 81-86806-99-7