১৯৯০ বানতলা ধর্ষণ মামলা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৯৯০ বানতলা ধর্ষণ মামলা
তারিখ৩০ মে, ১৯৯০
সময়সন্ধ্যা সাড়ে ছটা ভারতীয় প্রমাণ সময়
অবস্থানবানতলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মৃত(১ জন মহিলা ও ১ জন পুরুষ)
আহত(মহিলা)

১৯৯০ সালের ৩০ মে গোসাবা রাঙাবেড়িয়া থেকে ফেরার পথে বানতলা রোডে একদল দুষ্কৃতির হাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুই মহিলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও একজন ইউনিসেফের আধিকারিক ধর্ষিতা হন। দুষ্কৃতিদের বাধা দিতে গিয়ে একজন আধিকারিক ও তাদের গাড়ির চালক নিহত হন।

ঘটনা[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালের ৩০ মে গোসাবায় একটি টীকাকরণ কর্মসূচি সেরে তিন জন স্বাস্থ্য আধিকারিকের একটি দল কলকাতায় ফিরছিলেন।[১] এই দলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত জেলা গণমাধ্যম বিভাগের উপ-আধিকারিক অনিতা দেওয়ান, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিক উমা ঘোষ এবং ইউনিসেফের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন দিল্লি কার্যালয়ের প্রতিনিধি রেণু ঘোষ। সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ যখন তারা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের কাছে বানতলায় পৌঁছান তখন ৪-৫ জন যুবক স্থানীয় ক্লাবের কাছে তাদের গাড়ি থামাতে বাধ্য করে। গাড়ির চালক অবনী নাইয়া তাদের পাশ কাটিয়ে গাড়ি নিয়ে পালাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি উলটে যায়। এই সময় আরও ১০-১২ জনের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়। তারা গাড়ির একজন আধিকারিককে টেনে বার করে। আগের দলটি অন্য দুই আধিকারিককে বার করে। গাড়ির চালক তাদের বাধা দিতে যান, কিন্তু ব্যর্থ হন। দলটি গাড়ির চালককে হত্যা করার চেষ্টা করে এবং গাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।[২] আধিকারিকদের কাছের একটি ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। একজন আধিকারিক তাদের বাধা দিতে যান। ধর্ষকরা তাকে হত্যা করে।

রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ পুলিশ গিয়ে আধিকারিকদের নগ্ন দেহ উদ্ধার করে। তাদের ক্যালকাটা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের আপদকালীন বিভাগে ভর্তি করা হয়ে। প্রথম দিকে তাদের মৃত মনে করা হয়ে হয়েছিল। কিন্তু দুজন বেঁচে ছিলেন। তাদের চিকিৎসা শুরু হয়। একজন মহিলা ডাক্তার জনৈক আধিকারিকের যোনিতে একটি ধাতব টর্চ দেখে অজ্ঞান হয়ে যান।

আহত ড্রাইভার অবনী নাইয়াকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার দেহে ভারী অস্থের ৪৩টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। [৩] আক্রমণকারীরা তার পুরুষাঙ্গটি পিষে দিয়েছিল। ১৯৯০ সালের ৪ জুন, সকাল ৫টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রশিক্ষণরত স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ বিশ্বনাথ কাহালি তার অটপসি করেছিলেন।

তদন্ত[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশান্ত শূর জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা আধিকারিকদের শিশুপাচারকারী মনে করে আক্রমণ করেছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এই ঘটনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, এমন মারধরের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তীতে ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি হয়। রাজ্যে এই বীভতস ঘটনা আলোড়ন ও তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করে।

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. "Woman Official lynched in Calcutta"। The Statesman। Kolkata। ১ জুন ১৯৯০। 
  2. Bandyopadhyay, D (৯ অক্টোবর ২০১০)। "Musings of a Pensionjivi on Sumanta Banerjee's Letter"Mainstream Weekly। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৩ 
  3. Sengupta, Sukhoranjan (২২ জুন ১৯৯০)। Anandabazar Patrika (Bengali ভাষায়)। Kolkata