বিষয়বস্তুতে চলুন

ফিলিস্তিনি সাহিত্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ফিলিস্তিনি সাহিত্য  বলতে আরবি ভাষায় ফিলিস্তিনিদের রচিত উপন্যাস, ছোট গল্প এবং কবিতাসমূহকে বোঝানো হয়।  আরবি সাহিত্যে সমসাময়িক ফিলিস্তিনি সাহিত্যের বিশেষত্ব হলো অত্যন্ত উচ্চস্তরের বিদ্রূপ সাহিত্য, অস্তিত্ববাদ এবং আত্মপরিচয়ের আলোচনা। দখলদারিতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, নির্বাসন, বিচ্ছেদ, জন্মভূমির প্রতি আশা এবং ভালোবাসা ইত্যাদি ফিলিস্তিনি সাহিত্যের সাধারণ আলোচ্য বিষয়।

সাধারণ পর্যালোচনা[সম্পাদনা]

ফিলিস্তিনি সাহিত্য আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটি,  এটার সম্পর্ক ফিলিস্তিনি জাতীয়তার সাথে, কোন এলাকার সাথে নয়।[১] সাধারণত মিশরি সাহিত্য বলতে মিশরে রচিত সাহিত্যকে বোঝানো হয়, জর্দানি সাহিত্য বলতে জর্দানে রচিত সাহিত্যকে বোঝানো হয়, একইভাবে ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ফিলিস্তিনি সাহিত্যও একটি এলাকার সাথে সম্পর্কিত ছিল। ১৯৪৮ সালের নাকবার পর থেকে ফিলিস্তিনি সাহিত্য বলতে "ফিলিস্তিনিদের রচিত সাহিত্যকে" [২]:9 বোঝানো হয়, রচয়িতা যে দেশেই বসবাস করুন না কেন।[১]

এ ছাড়াও, ফিলিস্তিনি সাহিত্য সারা বিশ্বে চলমান উৎপীড়ন এবং বৈষম্য সম্পর্কে কথা বলে। ফিলিস্তিনের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিক গাসসান কানাফানি, যিনি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্য পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেন, তিনি তাঁর বইয়ে লিখেন, "আমি আমার গল্পগুলোর চরিত্রসমূহকে কোন ধরনের মনোভাব সংবরণ ছাড়াই তাদের অবস্থান ব্যক্ত করার স্বাধীনতা দিয়েছি।". ফিলিস্তিনি কবিদের লেখায়ও এই আন্তর্জাতিক একতাবোধ পাওয়া যায়, উদাহরনস্বরূপ  মাহমুদ দারউইশ, সামিহ আল কাসিম প্রমূখের কবিতার কথা বলা যায়।

১৯৪৮ সালের নাকবা এবং ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্য  ফিলিস্তিনিদের আত্মপরিচয় রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; দুই যুগের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন রচনা করে, সশস্ত্র প্রতিরোধের অনুপস্থিতিতে যা ফিলিস্তিনিদের আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। গাসসান কানাফানি তাঁর Palestinian Resistance Literature Under Occupation[৩] বইয়ে উল্লেখ করেন, "সশস্ত্র প্রতিরোধের মতোই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্য ঐতিহাসিক ধারাবহিকতায় একটি নতুন মাত্রার সংযোজন করে, যা ফিলিস্তিনিদের জীবন থেকে গত অর্ধশতাব্দিতেও বিচ্ছিন্ন হয় নি।”.[৩]

১৯৬৭ সালের পর থেকে অধিকাংশ সমালোচকই ফিলিস্তিনি সাহিত্যকে সাহিত্যিকদের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে মোটা দাগে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন: ১) ইসরায়েলের ভিতরে বসবাসকারীদের সাহিত্য ২) দখলিকৃত অঞ্চলের  ফিলিস্তিনিদের সাহিত্য ৩) মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে (ফিলিস্তিনি ডায়াস্পরায়) অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের সাহিত্য.[৪]

হান্নাহ আমিত-কোচাভি  মাত্র দুটি ভাগ বা শাখাকে সমর্থন করেন: ইসরায়েল রাষ্ট্রের ভিতরে লেখা সাহিত্য এবং এর বাইরে লেখা সাহিত্য।[১][২]:11 এছাড়াও তিনি ১৯৪৮ সালের পূর্বে ও পরে রচিত সাহিত্যের মধ্যেও পার্থক্য আছে বলে মনে করেন।[১]  ২০০৩ সালে Studies in the Humanities জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে স্টিভেন সালাইতা ইংরেজি ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম নিয়ে গঠিত চতুর্থ আরেকটি শাখার কথা উল্লেখ করেন, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনি অবিভাসীদের লেখা,  যেগুলোকে তিনি "ফিলিস্তিন বিষয়ে বিদেশে রচিত সাহিত্য" বলে আখ্যায়িত করেছেন।[৪] মরিস এবিলিনির মতে ফিলিস্তিনিদের লেখা ইংরেজি সাহিত্যকে চতুর্থ শাখা মনে করা যথেষ্ট নয়। কেননা, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমি থেকে স্থানচ্যুতির কারণে তাদের মধ্যে যে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধুমাত্র আরবি ও ইংরেজিভাষী অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। এ জন্য এবিলিনি একটি বহুভাষিক শাখা প্রস্তাব করেন, যে শাখার অন্তর্ভুক্ত হবে ফিলিস্তিনি অথবা ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূতদের লেখা ইংরেজি, ইতালীয়, ডেনিশ, হিব্রু এবং অন্যান্য ভাষায় লেখা সাহিত্যকর্ম।

ফিলিস্তিনি সাহিত্য তীব্র রাজনৈতিক হতে পারে, যেমনটা জোর দিয়ে বলেছেন সালমা খাদরা জায়ুসি এবং ঔপন্যাসিক লাইনা বদর, যারা ফিলিস্তিনিদের “সামষ্টিক পরিচয়” এবং তাদের সংগ্রামের বিষয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশের কথাও উল্লেখ করেছেন।.[৫]  উদাহরনস্বরূপ কবি মউরিদ বারগউতি বলেন, "কবিতা কোন সরকারি চাকুরে নয়, কোন সৈনিকও নয়, কবিতা কারো অধীনস্থ নয়।"[৫] 

কবিতা[সম্পাদনা]

প্রাক ইসলামী যুগের ক্লাসিক রীতির কবিতা ফিলিস্তিনে অত্যন্ত জনপ্রিয়।  ২০ বছর আগেও স্থানীয় লোক সঙ্গীত আবৃত্তি করা প্রতিটি ফিলিস্তিনি শহরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল।[৬]

১৯৪৮ সালের নাকবার পর কবিতা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরিণত হয়।  যে সকল ফিলিস্তিনি ১৯৫২ সালের নাগরিকত্ব আইনের পর ইসরায়েলের আরব নাগরিক হয়েছিলেন, তাদের কেন্দ্র করে প্রতিবাদী কবিতার একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়, যে ধারাটিতে মাহমুদ দারউইশ, সামিহ আল কাসিম এবং তাওফিক আল যায়াদের মতো কবিরা সম্পৃক্ত ছিলেন।[৬]

 আরবদেশসমূহের সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্কের অভাবে এ সকল কবিদের বেশির ভাগ কবিতাই অন্যান্য আরবদেশসমূহে অজ্ঞাত ছিল। ফিলিস্তিনি লেখক গাসসান কানাফানি লেবাননে নির্বাসিত  হওয়ার পর ১৯৬৬ সালে তিনি সেখান থেকে ফিলিস্তিনি কবিদের কবিতা সংকলন প্রকাশ করলে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়।[৬]

 পদকজয়ী কবি, নাট্যকার এবং লেখক নাতালি হানযালে অনেক লেখা বিভিন্ন কাব্যসমগ্র ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা ১২ টি ভাষায় অনুদিত হয়।  তিনি গবেষণা এবং অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যে সুপরিচিত হন। তিনি The Poetry of Arab Women (আরব মহিলাদের কবিতা) শীর্ষক একটি কবিতা সমগ্র সম্পাদনা করেন, যেটি আরব মহিলা কবিদের পশ্চিমা বিশ্বের পাঠকদের নিকট পরিচিত করে তুলে।[৭]

  ফিলিস্তিনি কবিরা প্রায়ই তাদের হারানো মাতৃভূমির প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং প্রত্যাশা বিষয়ে কবিতা লিখে থাকেন।[৬]

হেকায়াতি/গল্পকথক[সম্পাদনা]

গল্প কথন আরবিভাষী দেশ সমূহের সাংস্কৃতিক জীবনের অংশ। আরব্য রজনীর গল্পগুলো আরবি সংস্কৃতিতে কোন ব্যতিক্রম নয়। ফিলিস্তিনের প্রতিটি ছোট শহরএবং গ্রামে ভ্রাম্যমাণ হেকায়াতি/গল্পকথকরা ভ্রমণ করে এবং তাদের জানা গল্পগুলে বলে। যে গল্পগুলো গল্পকথকরা একদা সব বয়সের শ্রোতাদের বলতেন, বর্তমানে সেগুলো ফিলিস্তিনি ডায়াসপরা থেকে শিশুতোষ বই হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Kochavi নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. Elad-Bouskila, Ami (1999).
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ReferenceA নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Salaita নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Soueif নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Shahin নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7.  
  8. Sonia Nimr, Hannah Shaw, Ghada Karmi (2008) “Ghaddar the Ghoul and Other Palestinian Stories”, frances lincoln ltd, আইএসবিএন ১-৮৪৫০৭-৫২৩-৪