বিষয়বস্তুতে চলুন

বনু কায়নুকা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বনু কায়নুকা (আরবি: بنو قينقاع; বানু কাইনুকা, বানু কায়নুকা, বানু কাইনুকা, বানু কায়নুকা নামেও লেখা হয়) মদিনার (বর্তমানে সৌদি আরবের অংশ) বসবাসকারী তিনটি প্রধান ইহুদি গোত্রের একটি ছিল। কর্মদোষে বহিষ্কৃত হওয়ার আগে এই গোত্রটি সেখানে বাস করতো। তারা ছিল বণিক এবং ধনী হিসেবে পরিচিত ছিল। তারা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বসবাস করতো এবং পূর্বে বনু খাজরাজ গোত্রের সাথে মিত্র ছিল।[১]

ইসলামী ঐতিহ্য বলে যে ৬২৪ সালে, যখন একজন মুসলিম নারী বনু কায়নুকার একজন স্বর্ণকারের দোকানে আসেন, তখন স্বর্ণকার প্রথমে তার নেকাব খুলে চেহারা দেখে চায়, মহিলা রাজী না হলে স্বর্ণকার মহিলা যে চেয়ারে বসে ছিল সে চেয়ারে কাপড়ের সাথে পেরেক গেঁথে দেয়, মহিলা চেয়ার ছেড়ে উঠার সময় বিবস্ত্র হয়ে পড়েন এবং তা দেখে স্বর্ণকার ও তার সঙ্গীসাথীরা হাসাহাসি এবং কদর্য অঙ্গভঙ্গী শুরু করে। এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে বনু কায়নুকার লোকজন শান্তিচুক্তির পরোয়া না করে উপলক্ষ্য খুঁজছিল কিভাবে তা ভঙ্গ করা যায়। বিবস্ত্র মহিলা তাঁর সম্ভ্রম হারানোর বেদনায় চিৎকার করে কেঁদে উঠলে মুসলিম যুবক প্রতিবাদ করে। স্বর্ণকার সহ অন্য ইহুদীরা মুসলিম যুব্ক কে তার নিজের রাস্তা মাপতে বললে বাক বিতন্ডা শুরু হয় এবং বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে মুসলিম যুবক মুসলিম মহিলার সম্ভ্রম লুটের প্রতিশোধ হিসেবে আঘাত করলে স্বর্ণকার মৃত্যুবরণ করে। আশেপাশের ইহুদীরা কোন ধরণের বিচার আচার ছাড়াই মুসলিম যুবককে নির্মমভাবে হ্ত্যা করে। মুসলমানরা মদিনার সনদ ভঙ্গের অভিযোগে এই গোত্রের উপর অভিযোগ আনে।[২] এই ঘটনার পরই ইহুদীরা নিজেদের দূর্গে শক্ত অবস্থান নেয় কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে চুক্তি ভঙ্গের পরিণতি ভাল হবে না। দূর্গে শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি তারা মদিনায় তাদের ব্যবসায়িক সহযোগীদের মাধ্যমে কুটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে এবং যুদ্ধের সুযোগ খুঁজতে থাকে। মুসলমানরা মদিনার সনদ ভঙ্গের অভিযোগে বনু কায়নুকার দূর্গ অবরোধ করে।[২] বেশ কিছুদিন অবরোধের পরে বনু কায়নুকা আত্মসমর্পণ করে। শান্তিচুক্তি ভঙ্গের কারণে মুহাম্মদ চাইলে তাদের সকলকে মৃত্যুদন্ড দিতে পারতেন। কিন্তু মুহাম্মদ শুধু তাদেরকে প্রাণভিক্ষাই দেন নি। তাদের সকল সম্পত্তি সহ মদিনা ছেড়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। বনু কায়নুকা যাওয়ার সময় এমনকি তাদের ঘরের দরজা পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা তাদের বাসস্থান গুলি ধ্বংস করে দেয় যাতে মুসলিমরা সেখানে থাকতে না পারে কিংবা তাদের নির্মাণশৈলী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে না পারে। [৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. (Bosworth et al. 1998, পৃ. 824)
  2. Wensinck, A.J. "Kaynuka, banu". Encyclopaedia of Islam
  3. Michael V. McDonald (trans.), William Montgomery Watt (annot.) (১৯৮৭)। The history of al-Tabari (পিডিএফ)7। New York। পৃষ্ঠা 87। আইএসবিএন 0-88706-345-4