জাতীয় সংসদ
জাতীয় সংসদ | |
---|---|
ধরন | |
ধরন | |
মেয়াদসীমা | ৫ বছর |
ইতিহাস | |
শুরু | ৭ মার্চ ১৯৭৩ |
পূর্বসূরী | বাংলাদেশ গণপরিষদ |
নতুন অধিবেশন শুরু | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ (শপথ গ্রহণ ১০ জানুয়ারি ২০২৪) |
নেতৃত্ব | |
কে এম আব্দুস সালাম ২৮ জুলাই ২০২১ থেকে | |
গঠন | |
আসন | ৩৫০ (নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসন-সহ) |
রাজনৈতিক দল | সরকার (২৭১)
বিরোধী দল (৭৮)
|
নির্বাচন | |
৩০০ আসন সরাসরি ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ভোটদান মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় এবং নির্বাচিত সদস্যদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মাধ্যমে বরাদ্দ মহিলাদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন। | |
প্রথম নির্বাচন | ৭ মার্চ ১৯৭৩ |
সর্বশেষ নির্বাচন | ৭ জানুয়ারি ২০২৪ |
পরবর্তী নির্বাচন | জানুয়ারি ২০২৯ |
সভাস্থল | |
জাতীয় সংসদ ভবন, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা, বাংলাদেশ | |
ওয়েবসাইট | |
http://www.parliament.gov.bd/ |
জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসভা। এককক্ষ বিশিষ্ট এই আইনসভার সদস্য সংখ্যা ৩৫০; যার মধ্যে ৩০০ জন সংসদ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন এবং অবশিষ্ট ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যগণ নির্বাচিত ৩০০ সংসদ সদস্যের ভোটে (পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে) নির্বাচিত হন। সংসদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর।
সংসদ ভবন[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন পৃথিবীর দৃষ্টিনন্দন আইনসভা ভবনের একটি। রাজধানী ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার আয়তন ২১৫ একর। যেখানে মূল ভবনের পাশাপাশি রয়েছে উন্মুক্ত সবুজ পরিসর, মনোরম জলাধার ও সংসদ সদস্যদের কার্যালয়।
১৯৬১ সালে ৯ তলা এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইতিহাসের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের উদ্বোধন করা হয়। দৃষ্টিনন্দন এ ভবনের নকশা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত স্থপতি লুই আই কান।[১] সংসদ ভবন এলাকাকে প্রধান ভবন, দক্ষিণ প্লাজা ও প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা এই তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। সংসদের পেছন দিকে ক্রিসেন্ট লেক নামে একটি নান্দনিক জলাধার রয়েছে।[২]
আসন বিন্যাস[সম্পাদনা]
জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যা ৩৫০, অতিথি আসন সংখ্যা ৫৬, কর্মকর্তা আসন সংখ্যা ৪১, সাংবাদিক আসন সংখ্যা ৮০ এবং দর্শক আসন সংখ্যা ৪৩০।
সদস্য পদ[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া ছাড়াও বয়স ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে। এছাড়া অপ্রকৃতিস্থ, দেউলিয়া কিংবা দ্বৈত নাগরিকত্ব এক্ষেত্রে প্রার্থীর অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।[৩]
সদস্যরা তাদের নিজ নিজ আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে অধিকাংশের ভোটে নির্বাচিত হন। সদস্যগণ ৫ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। তারা নিরপেক্ষ বা একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অধিভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।[৩]
ক্ষমতা ও অধিকার[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা নিয়োগ করেন। [৩] প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই একজন সংসদ সদস্য হতে হবে এবং মন্ত্রীসভার ৯০% সদস্যকেও সংসদ সদস্য হতে হবে। [৪] [৫] রাষ্ট্রপতিকে অবশ্যই একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে, যিনি নিজের যুক্তিযুক্ত মতামতে, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন রাখেন। [৬] মন্ত্রিসভা সর্বদা সংসদের কাছে এবং প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছেও জবাবদিহি করেন। [৩]
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি উন্মুক্ত ব্যালট ভোটের মাধ্যমে সংসদ দ্বারা নির্বাচিত হন। [৭] ফলস্বরূপ, বিরোধীদলের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের খুব কমই সুযোগ থাকে। ফলে সাধারণত বিরোধীদল রাষ্ট্রপতি পদের জন্য কোনো প্রার্থী মনোনীত করে না এবং সরকারি দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন এবং পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, [৮] জিল্লুর রহমান, [৯] একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী [১০] এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ সকলেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সংসদ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনও করতে পারে। [৩]
বিল পরীক্ষা, সরকারি নীতি পর্যালোচনা এবং জনগুরুত্বপূর্ণ অন্য যেকোন বিষয়ে সংসদ যেকোনো সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করতে পারে। [৩] তবে এই কমিটির কার্যত ক্ষমতা সবসময়ই ছিল নামমাত্র; বিচারিক ক্ষমতাও অস্পষ্ট, [১১] বিশেষ করে যদি সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে সংসদীয় কমিটি এবং সিনিয়র বেসামরিক কর্মচারীদের কাছে জবাবদিহি করার প্রয়োজন নেই। সরকারী প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে সরকারকে সংসদীয় কমিটির কাছে খুব কমই জবাবদিহি করতে হয়। [১২]
বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ফ্লোর ক্রসিং (নিজ দল থেকে পদত্যাগকৃত সাংসদ), মুক্ত ভোট (নিজ দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া) বা অনাস্থা প্রস্তাব পাস করার ক্ষেত্রে সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সাধারণ বুদ্ধিজীবী, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক, নাগরিক অধিকার কর্মী এবং সংসদের অনেক সদস্য আইনটির সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে ৭০ নং অনুচ্ছেদ বাক স্বাধীনতা এবং বিবেকের স্বাধীনতাকে হরন করে এবং এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। উপরন্তু, এই অনুচ্ছেদে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বিশাল ক্ষমতা প্রদান এবং ক্ষমতার ভারসাম্যকে সীমিত করা হয়েছে।
সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদ সংসদীয় অধিবেশনের মধ্যে সদস্যদের বক্তৃতা এবং কর্মের জন্য বিচার বিভাগকে জবাবদিহি করতে হবে না। [৩] ৪৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতির সেবায় যে কাউকে ক্ষমা প্রদানের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত [৩] এই অনুচ্ছেদের অধিনে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদকে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ অনুমোদন করার অনুমতি দেওয়া হয়।
সংসদের ব্যাপ্তি[সম্পাদনা]
সংসদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। কিন্তু দেশের সংকটকালে সংবিধান সমুন্নত রাখতে আইন পাসের মাধ্যমে এ মেয়াদের হেরফের হতে পারে। [১৩]
সংসদ | নির্বাচন | মেয়াদ | সংখ্যাগরিষ্ঠ দল | দলীয় প্রধান | বিরোধী দল | বিরোধী দলীয় প্রধান | বৈঠক দিবসের সংখ্যা | প্রণীত আইনের সংখ্যা | মন্তব্য | |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
প্রথম জাতীয় সংসদ | ৭ই মার্চ ১৯৭৩ | ৭ এপ্রিল ১৯৭৩ - ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ মুজিবুর রহমান | প্রযোজ্য নয় | প্রযোজ্য নয় | ১৩৪ | ১৫৪ | অন্য কোন রাজনৈতিক দল ১টির বেশি আসন লাভ করেনি | |
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ | ২ এপ্রিল, ১৯৭৯- ২৪ মার্চ, ১৯৮২ | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) | জিয়াউর রহমান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | প্রযোজ্য নয় | ২০৬ | ৬৫ | বিরোধী দল ভেঙ্গে যাওয়ায় নেতা নির্বাচন করতে পারেনি | ||
তৃতীয় জাতীয় সংসদ | ১০ জুলাই, ১৯৮৬-৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭ | জাতীয় পার্টি | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ হাসিনা | ৭৫ | ৩৯ | |||
চতুর্থ জাতীয় সংসদ | ১৫ এপ্রিল, ১৯৮৮- ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ | জাতীয় পার্টি | এইচ এম এরশাদ | বিরোধী দলীয় জোট | এ. এস. এম. আব্দুর রব | ১৬৮ | ১৪২ | আব্দুর রব এরশাদের নিযুক্ত বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন | ||
পঞ্চম জাতীয় সংসদ | ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ | ৫ এপ্রিল, ১৯৯১- ২৪ নভেম্বর, ১৯৯৫ | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) | খালেদা জিয়া | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ হাসিনা | ৪০০ | ১৭৩ | ||
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | ১৯ মার্চ, ১৯৯৬- ৩০ মার্চ, ১৯৯৬ | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) | খালেদা জিয়া | বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি | প্রযোজ্য নয় | ০৪ | ০১ | ||
সপ্তম জাতীয় সংসদ | জুন ১২, ১৯৯৬ | ১৪ জুলাই, ১৯৯৬- ১৩ জুলাই, ২০০১ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ হাসিনা | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) | খালেদা জিয়া | ৩৮২ | ১৯১ | ||
অষ্টম জাতীয় সংসদ | অক্টোবর ১, ২০০১ | ২৮ অক্টোবর, ২০০১- ২৭ অক্টোবর, ২০০৬ | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) | খালেদা জিয়া | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ হাসিনা | ৩৭৩ | ১৮৫ | ||
নবম জাতীয় সংসদ | ২৯ শে ডিসেম্বর ২০০৮ | ২৫, জানুয়ারি ২০০৯- ২০১৩ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ হাসিনা | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) | খালেদা জিয়া | ৪১৮ | ২৭১ | ||
দশম জাতীয় সংসদ | ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ | ২৯ জানুয়ারি, ২০১৪-০৩ জানুয়ারি, ২০১৯ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ হাসিনা | বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি | রওশন এরশাদ | বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে। | |||
একাদশ জাতীয় সংসদ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ | ০৩ জানুয়ারি, ২০১৯-বর্তমান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | শেখ হাসিনা | জাতীয় পার্টি | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ[১৪] |