সালাত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
অ পুনর্নির্দেশ টেমপ্লেট যোগ |
Lazy-restless (আলোচনা | অবদান) নামায-এ করা পুনর্নির্দেশ সরানো হয়েছে ট্যাগ: পুনর্নির্দেশ সরানো হয়েছে |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
{{ইসলামী আক্বিদাহ}} |
|||
#REDIRECT [[নামায]] |
|||
[[File:Salat Positions and Prayers - transparent background - RGB.jpg|thumb|নামাজের প্রধান চারটি আসন এবং সম্পর্কিত দোয়া দুরুদ।]] |
|||
'''নামায''', '''নামাজ''' ({{lang-fa|نَماز}}) বা '''সালাত''' হল [[ইসলাম ধর্ম|ইসলাম ধর্মের]] প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ [[ওয়াক্ত]] (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা [[ফরজ]]। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শাহাদাহ্ বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। |
|||
'''নামায''' শব্দটি [[ফার্সি ভাষা]] থেকে উদ্ভূত ({{lang-fa|نماز}}) এবং [[বাংলা ভাষা]]য় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা [[আরবি ভাষা]]র '''সালাত''' শব্দের ({{lang-ar|صلاة}}, কুরআনিক আরবি: صلوة,) প্রতিশব্দ। [[বাংলা ভাষা]]য় 'সালাত'-এর পরিবর্তে সচরাচর 'নামাজ' শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। [[ফার্সি ভাষা|ফার্সি]], [[উর্দু ভাষা|উর্দু]], [[হিন্দি ভাষা|হিন্দি]], [[তুর্কী ভাষা|তুর্কী]] এবং [[বাংলা ভাষা]]য় একে নামায (ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত) বলা হয়। কিন্তু এর মূল আরবি নাম '''সালাত''' (একবচন) বা '''সালাহ্''' (বহুবচন)। |
|||
{{একটি পুনর্নির্দেশ}} |
|||
"সালাত" -এর আভিধানিক অর্থ [[দোয়া]], রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।<ref>[http://www.at-tahreek.com/salatbangla/4.html#_ftn2 ছালাতুর রাসূল (ছা:)- মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব]</ref> |
|||
== ইতিহাস == |
|||
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী [[মুহাম্মাদ]] (সা.) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন এবং অব্যবহিত পরে সূরা মু’মিন-এর ৫৫ নম্বর আয়াত স্রষ্টার পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে সকাল, সন্ধ্যা ও দুপুরে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এ সময় যুহর, আসর ও ইশা ২ রাকায়াত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে ২ রাকায়াত বিশিষ্ট যুহর, আসর ও ইশাকে ৪ রাকায়াতে উন্নীত করার আদেশ দেয়া হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=রাসূলুল্লাহ সা:-এর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি |ইউআরএল=http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=100413 |সংগ্রহের-তারিখ=২৭ জানুয়ারি ২০১৩ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20130129151158/http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=100413 |আর্কাইভের-তারিখ=২৯ জানুয়ারি ২০১৩ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> |
|||
== শর্ত == |
|||
কারো ওপর নামাজ ফরয হওয়ার জন্য শর্তগুলো হলোঃ- |
|||
* মুসলিম হওয়া |
|||
* সাবালক হওয়া এবং |
|||
* সুস্থ মস্তিস্কের হওয়া। |
|||
== নামাযের শর্তাবলী == |
|||
নিম্নের পাঁচটি কারণ সংঘটিত হলে নামাজ বৈধ হয়। |
|||
* নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হলে। অনিশ্চিত হলে নামাজ হবে না, যদি তা ঠিক ওয়াক্তেও হয়। |
|||
* কাবামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তবে অসুস্থ এবং অপারগ ব্যাক্তির জন্য এই শর্ত শিথিলযোগ্য। |
|||
* [[সতর]] ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হল নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ (টাখনুর উপরে) পর্যন্ত, আর নারীর সতর হল মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জি ও দুই পায়ের পাতা ব্যতীত সারা শরীর। |
|||
* পরিধেয় কাপড়, শরীর ও নামাজের স্থান পরিষ্কার বা পাক-পবিত্র হতে হবে। |
|||
* [[অযু]], [[গোসল]] বা [[তায়াম্মুম|তায়াম্মুমের]] মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। |
|||
==নামাযের ফরজ== |
|||
{{মূল নিবন্ধ|নামাযের ফরজসমূহ}} |
|||
নামাযের ফরজ মোট ১৩ টি। আহকাম ৭ টি। আরকান ৬ টি। নামাযের বাহিরের কাজগুলিকে আহকাম বলে। আর নামাযের ভিতরের কাজগুলোকে আরকান বলে। |
|||
====আহকাম==== |
|||
* শরীর পবিত্র হওয়া। |
|||
* কাপড় বা বস্ত্র পবিত্র হওয়া। |
|||
* নামাযের জায়গা পবিত্র হওয়া। |
|||
* সতর ঢেকে রাখা। |
|||
* [[কিবলা|কিবলামুখী]] হওয়া। |
|||
* ওয়াক্তমত নামায আদায় করা |
|||
* নামাযের নিয়্যত করা। |
|||
====আরকান==== |
|||
* তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করা। |
|||
* দাঁড়িয়ে নামায পড়া। |
|||
* সুরা ফাতিহার সাথে কুরআন পড়া। |
|||
* রুকু করা। |
|||
* দু্ই সিজদা করা। |
|||
* শেষ বৈঠক করা। |
|||
== নামাজের নিয়ম == |
|||
{{মূল নিবন্ধ|নামাজের নিয়মাবলী}} |
|||
[[File:Muslims praying in a Masque in Bangladesh.jpg|thumb|বাংলাদেশের একটি মসজিদে মুসলমান পুরুষদের নামাযের দৃশ্য।]] |
|||
নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। নামাজের ধাপ বা অংশকে ''রাকাত'' বলা হয়। প্রতি রাকাতের শুরুতে [[সুরা ফাতিহা]] ও অপর একটি সুরা পাঠের পর ''রুকু'' করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে তার পর সিজদা দিতে হয়। তিন বা চার রাকাতের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু" দোয়া পড়তে হয়। নামাজের শেষ রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু" দোয়ার সাথে "দরূদ শরীফ" পড়তে হয়। নামাজের শেষভাগে দুই দিকে সালাম ফেরাতে হয়। এর পর দলবদ্ধভাবে [[মুনাজাত]] বা প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। নামাজের কিছু নিয়ম পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। |
|||
== নামাযের ওয়াক্ত ও রাকাত == |
|||
[[চিত্র:Salattimes.jpg|thumb|right||350 px|১ ফযর, ২ যোহর, ৩ আসর, ৪ মাগরিব, ৫ ইশা]] |
|||
প্রতিদিন একজন মুসলিমকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্ত হল "ফজর নামাজ" সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এর ব্যপ্তিকাল। এরপর "যুহর ওয়াক্ত" বেলা দ্বিপ্রহর হতে "আসর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত যার ব্যপ্তি। তৃতীয় ওয়াক্ত "আসর ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে "মাগরিব ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। "মাগরিব ওয়াক্ত" এর প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় "ইশা ওয়াক্ত" এবং এর ব্যপ্তি প্রায় "ফজর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত। |
|||
উপরোক্ত ৫ টি ফরজ নামায ছাড়াও ইশা'র নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলিমরা আদায় করে থাকে। |
|||
কোন ওয়াক্ত-এর নামাজ কয় রাকাত তা দেয়া হল : |
|||
{| class="wikitable" |
|||
|- |
|||
! নাম |
|||
! সময় |
|||
! ফরযের পূর্বে |
|||
! ফরয |
|||
! ফরযের পর |
|||
|- |
|||
|- |
|||
| '''[[ফজরের নামাজ|ফযর]] ('''فجر''')''' |
|||
| [[ঊষা]] থেকে [[সূর্যোদয়]] |
|||
| ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
|||
| ২ রাকাত |
|||
| - |
|||
|- |
|||
| [[যোহরের নামাজ|যুহর]] ('''ظهر''') |
|||
| ঠিক দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত |
|||
| ২/৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
|||
| ৪ রাকাত |
|||
| ২/৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
|||
|- |
|||
| [[আসরের নামাজ|আসর]] ('''عصر''') |
|||
| যোহরের শেষ ওয়াক্ত থেকে [[সূর্য]] হলুদ বর্ণ পূর্ব পর্যন্ত অন্য মতে সূর্যস্তের পূর্ব পর্যন্ত |
|||
|২/৪ রাকাত সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদা |
|||
| ৪ রাকাত |
|||
| - |
|||
|- |
|||
| [[মাগরিবের নামাজ|মাগরিব]] ('''مغرب''') |
|||
| [[সূর্যাস্ত|সূর্যাস্তের]] পর থেকে [[গোধূলি]] পর্যন্ত |
|||
| - |
|||
| ৩ রাকাত |
|||
| ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
|||
|- |
|||
| [[ইশার নামাজ|ইশা]] ('''عشاء''') |
|||
| গোধূলি থেকে অর্ধ রাত পর্যন্ত |
|||
| ৪ রাকাত সুন্নতে গায়ের মুয়াক্কাদা |
|||
| ৪ রাকাত |
|||
| ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
|||
|- |
|||
| [[বিতর]] ('''وتر''') |
|||
|ইশার পর থেকে ফজরের পূর্র পর্যন্ত |
|||
| |
|||
| |
|||
|১ বা ৩ বা ৫ বা ৭ বা ৯ বা ১১ বা ১৩ |
|||
|} |
|||
<sup>১</sup> সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত [[মুহাম্মদ]] (সা.) প্রতিদিন এ নামাজগুলো পড়তেন। |
|||
<sup>২</sup>শুক্রবারে জুমা যুহর নামাজের পরিবর্তে পড়তে হয় |
|||
এশা নামাজ আদায় করার পর বেজোড় সংখ্যক রাকাত বিতর এর ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হয়। |
|||
==অন্যান্য নামায== |
|||
ফরয নামায ছাড়াও মুসলমানগণ আরো কিছু নামায আদায় করে থাকেন। সেগুলোকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। তবে শ্রেণিবিভাগ অনুসারে ফরয ছাড়া বাকি নামাযগুলোকে ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল এই তিনভাগে ভাগ করা যায়। |
|||
===ওয়াজিব নামায=== |
|||
নিয়মিত ওয়াজিব নামায হচ্ছে [[বিতিরের নামায]]। প্রত্যেকদিন [[এশা|এশার নামাযের]] পর হতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এই ওয়াজিব নামাযের সময় থাকে। এছাড়া কোন নফল নামাযের নিয়ত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। |
|||
===সুন্নাত নামায=== |
|||
{{More|সুন্নাত নামায}} |
|||
মুসলমানদের নবী [[মুহাম্মদ|হযরত মুহাম্মাদ (সা:)]] যেই নামাযগুলো আদায় করতেন, তাকে সুন্নাত নামায বলে। সুন্নাত নামায দুই প্রকার। ১. সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ২. সুন্নাতে যায়েদাহ |
|||
* সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলতে ঐসব নামাযকে বুঝায়, যেগুলো নবী (সা:) নিয়মিত আদায় করতেন। |
|||
* সুন্নাতে যায়েদাহ বলতে বুঝায়, মহানবী মুহাম্মাদ (সা:) যেসব সুন্নাত নিত্য আদায় করতেন না। |
|||
===নফল নামায=== |
|||
১. নফল নামায হলো এক প্রকার ঐচ্ছিক সুন্নত নামায। |
|||
২. বিভিন্ন প্রকারের নফল নামায আদায়ের প্রমাণ হাদিস সমূহে বর্ণিত আছে। |
|||
৩. নফল নামাজ সমূহ সাধারণত ২ রাকাত করে আদায় করতে হয়। |
|||
===জানাযার নামায=== |
|||
{{মূল নিবন্ধ|জানাযার নামায}} |
|||
===সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের নামায=== |
|||
{{মূল নিবন্ধ|বিশেষ নামায}} |
|||
== তথ্যসূত্র == |
|||
{{সূত্র তালিকা}} |
|||
{{ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ}} |
|||
{{Islam topics|state=collapsed}} |
|||
{{রমযান}} |
|||
{{সালাত}} |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:সালাত]] |
০৯:০৮, ২৬ মে ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
ইসলাম বিষয়ক ধারাবাহিক রচনার একটি অংশ আকীদা |
---|
১ আহমাদিয়া, কুতুববাদ ও ওয়াহাবিবাদ সহ ২ আলাওয়ি, আসাসিন ও দ্রুজ সহ ৩ আলেভি, বাক্তাশি, কিযিবাশ ও কালান্দারিয়া সহ ৪ আযারিকা, আজারদি, হারুবিয়া, নাজদাত এবং সুফ্রিয়া সহ ইসলাম প্রবেশদ্বার |
নামায, নামাজ (ফার্সি: نَماز) বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শাহাদাহ্ বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
নামায শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত (ফার্সি: نماز) এবং বাংলা ভাষায় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা আরবি ভাষার সালাত শব্দের (আরবি: صلاة, কুরআনিক আরবি: صلوة,) প্রতিশব্দ। বাংলা ভাষায় 'সালাত'-এর পরিবর্তে সচরাচর 'নামাজ' শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, তুর্কী এবং বাংলা ভাষায় একে নামায (ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত) বলা হয়। কিন্তু এর মূল আরবি নাম সালাত (একবচন) বা সালাহ্ (বহুবচন)।
"সালাত" -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।[১]
ইতিহাস
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সা.) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন এবং অব্যবহিত পরে সূরা মু’মিন-এর ৫৫ নম্বর আয়াত স্রষ্টার পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে সকাল, সন্ধ্যা ও দুপুরে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এ সময় যুহর, আসর ও ইশা ২ রাকায়াত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে ২ রাকায়াত বিশিষ্ট যুহর, আসর ও ইশাকে ৪ রাকায়াতে উন্নীত করার আদেশ দেয়া হয়।[২]
শর্ত
কারো ওপর নামাজ ফরয হওয়ার জন্য শর্তগুলো হলোঃ-
- মুসলিম হওয়া
- সাবালক হওয়া এবং
- সুস্থ মস্তিস্কের হওয়া।
নামাযের শর্তাবলী
নিম্নের পাঁচটি কারণ সংঘটিত হলে নামাজ বৈধ হয়।
- নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হলে। অনিশ্চিত হলে নামাজ হবে না, যদি তা ঠিক ওয়াক্তেও হয়।
- কাবামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তবে অসুস্থ এবং অপারগ ব্যাক্তির জন্য এই শর্ত শিথিলযোগ্য।
- সতর ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হল নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ (টাখনুর উপরে) পর্যন্ত, আর নারীর সতর হল মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জি ও দুই পায়ের পাতা ব্যতীত সারা শরীর।
- পরিধেয় কাপড়, শরীর ও নামাজের স্থান পরিষ্কার বা পাক-পবিত্র হতে হবে।
- অযু, গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
নামাযের ফরজ
নামাযের ফরজ মোট ১৩ টি। আহকাম ৭ টি। আরকান ৬ টি। নামাযের বাহিরের কাজগুলিকে আহকাম বলে। আর নামাযের ভিতরের কাজগুলোকে আরকান বলে।
আহকাম
- শরীর পবিত্র হওয়া।
- কাপড় বা বস্ত্র পবিত্র হওয়া।
- নামাযের জায়গা পবিত্র হওয়া।
- সতর ঢেকে রাখা।
- কিবলামুখী হওয়া।
- ওয়াক্তমত নামায আদায় করা
- নামাযের নিয়্যত করা।
আরকান
- তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করা।
- দাঁড়িয়ে নামায পড়া।
- সুরা ফাতিহার সাথে কুরআন পড়া।
- রুকু করা।
- দু্ই সিজদা করা।
- শেষ বৈঠক করা।
নামাজের নিয়ম
নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। নামাজের ধাপ বা অংশকে রাকাত বলা হয়। প্রতি রাকাতের শুরুতে সুরা ফাতিহা ও অপর একটি সুরা পাঠের পর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে তার পর সিজদা দিতে হয়। তিন বা চার রাকাতের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু" দোয়া পড়তে হয়। নামাজের শেষ রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু" দোয়ার সাথে "দরূদ শরীফ" পড়তে হয়। নামাজের শেষভাগে দুই দিকে সালাম ফেরাতে হয়। এর পর দলবদ্ধভাবে মুনাজাত বা প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। নামাজের কিছু নিয়ম পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
নামাযের ওয়াক্ত ও রাকাত
প্রতিদিন একজন মুসলিমকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্ত হল "ফজর নামাজ" সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এর ব্যপ্তিকাল। এরপর "যুহর ওয়াক্ত" বেলা দ্বিপ্রহর হতে "আসর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত যার ব্যপ্তি। তৃতীয় ওয়াক্ত "আসর ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে "মাগরিব ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। "মাগরিব ওয়াক্ত" এর প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় "ইশা ওয়াক্ত" এবং এর ব্যপ্তি প্রায় "ফজর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত।
উপরোক্ত ৫ টি ফরজ নামায ছাড়াও ইশা'র নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলিমরা আদায় করে থাকে।
কোন ওয়াক্ত-এর নামাজ কয় রাকাত তা দেয়া হল :
নাম | সময় | ফরযের পূর্বে | ফরয | ফরযের পর |
---|---|---|---|---|
ফযর (فجر) | ঊষা থেকে সূর্যোদয় | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা | ২ রাকাত | - |
যুহর (ظهر) | ঠিক দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত | ২/৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | ২/৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
আসর (عصر) | যোহরের শেষ ওয়াক্ত থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ পূর্ব পর্যন্ত অন্য মতে সূর্যস্তের পূর্ব পর্যন্ত | ২/৪ রাকাত সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | - |
মাগরিব (مغرب) | সূর্যাস্তের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত | - | ৩ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
ইশা (عشاء) | গোধূলি থেকে অর্ধ রাত পর্যন্ত | ৪ রাকাত সুন্নতে গায়ের মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
বিতর (وتر) | ইশার পর থেকে ফজরের পূর্র পর্যন্ত | ১ বা ৩ বা ৫ বা ৭ বা ৯ বা ১১ বা ১৩ |
১ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন এ নামাজগুলো পড়তেন।
২শুক্রবারে জুমা যুহর নামাজের পরিবর্তে পড়তে হয়
এশা নামাজ আদায় করার পর বেজোড় সংখ্যক রাকাত বিতর এর ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হয়।
অন্যান্য নামায
ফরয নামায ছাড়াও মুসলমানগণ আরো কিছু নামায আদায় করে থাকেন। সেগুলোকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। তবে শ্রেণিবিভাগ অনুসারে ফরয ছাড়া বাকি নামাযগুলোকে ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল এই তিনভাগে ভাগ করা যায়।
ওয়াজিব নামায
নিয়মিত ওয়াজিব নামায হচ্ছে বিতিরের নামায। প্রত্যেকদিন এশার নামাযের পর হতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এই ওয়াজিব নামাযের সময় থাকে। এছাড়া কোন নফল নামাযের নিয়ত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
সুন্নাত নামায
মুসলমানদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) যেই নামাযগুলো আদায় করতেন, তাকে সুন্নাত নামায বলে। সুন্নাত নামায দুই প্রকার। ১. সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ২. সুন্নাতে যায়েদাহ
- সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলতে ঐসব নামাযকে বুঝায়, যেগুলো নবী (সা:) নিয়মিত আদায় করতেন।
- সুন্নাতে যায়েদাহ বলতে বুঝায়, মহানবী মুহাম্মাদ (সা:) যেসব সুন্নাত নিত্য আদায় করতেন না।
নফল নামায
১. নফল নামায হলো এক প্রকার ঐচ্ছিক সুন্নত নামায। ২. বিভিন্ন প্রকারের নফল নামায আদায়ের প্রমাণ হাদিস সমূহে বর্ণিত আছে। ৩. নফল নামাজ সমূহ সাধারণত ২ রাকাত করে আদায় করতে হয়।
জানাযার নামায
সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের নামায
তথ্যসূত্র
- ↑ ছালাতুর রাসূল (ছা:)- মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
- ↑ "রাসূলুল্লাহ সা:-এর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি"। ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩।