বিষয়বস্তুতে চলুন

লুৎফুন্নাহার হেলেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লুৎফুন্নাহার হেলেন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
মৃত্যু৫ অক্টোবর, ১৯৭১

লুৎফুন্নাহার হেলেন (২৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৭-৫ অক্টোবর, ১৯৭১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি শিক্ষিকা রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহিদ হয়েছিলেন।[১][২]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

লুৎফুন্নাহার হেলেন জন্মেছিলেন ১৯৪৭ সালের ২৮ ডিসেম্বরে, মাগুরায়। ম্যাট্রিক পাস করার পর ১৯৬৫ সালে মাগুরা কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[১] স্নাতক শেষ করার পর তিনি মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬২ সালে আইউব খান বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মাগুরা কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের নারী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মাগুরা মহাকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। স্নাতক শেষ করার পর তিনি মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন তিনি।

মাগুরা শহরে বসবাস করলেও হেলেনদের গ্রামের বাড়ি ছিল মহম্মদপুর থানার হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম। এই গ্রামকে কেন্দ্র করে তখনকার মাওবাদী সংগঠন ইপিসিপি(এম-এল) গড়ে ওঠা গেরিলা অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে পার্টির দায়িত্ব পালন করতেন হেলেন।[৩]

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার একটি রাজাকার ক্যাম্প দখল করেন ও সেটাকে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে রূপান্তর করেন। তার ভাইয়েরাও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি এলাকার লোকদের যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এই নারী মুক্তিবাহিনী গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন ও হানাদার বাহিনী সম্পর্কিত খবর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করতেন।

অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার এক গ্রামে আবস্থানকালে রাজাকার ও আলবদর চক্রের গুপ্তচররা তার গোপন অবস্থানের কথা ফাঁস করে দেয়। অতঃপর চরমভাবে ঘৃণিত রাজাকার বাহিনীর একটি দলের হাতে ধরা পড়েন হেলেন। সে সময় তার কোলে ছিল শিশুপুত্র দিলীর। ঘৃণিত রাজাকাররা হেলেনকে ধরে এনে মাগুরা শহরে স্থাপিত হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে তাকে নিয়ে আসে এবং সেখানে তাকে হানাদার বাহিনীর হাতে তাকে তুলে দেয়। হেলেনের দু'বছর বয়সী শিশুপুত্র দিলীরকে হেলেনের পিতা মাতার কাছে ফেরত দিলেও শত অনুরোধ স্বত্ত্বেও হেলেনকে ফেরত দেওয়া থেকে বিরত থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা।

হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে নেওয়ার পর হেলেনার ওপর অকথ্য নিপীড়ন নির্যাতন চালায় নরপশুরা। নরপশুরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর আরো নির্মমতার পরিচয় দেয় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। হত্যার পর নরপশুরা তার মরদেহ জিপের পেছনে বেঁধে টেনে নিয়ে যায় শহরের অদূরে নবগঙ্গা নদীর ডাইভারশন ক্যানেলে। ওই ক্যানেলে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ ফেলে দেয়। শহিদ লুৎফুন্নাহার হেলেনের মৃতদেহ আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তার ছবি সংবলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস।[১][৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. লিলীমা আহমেদ (২০১২)। "হেলেন, লুৎফুন নাহার"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. Independent, The। "Victory is Theirs"Victory is Theirs | theindependentbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-২৭ 
  3. মাওবাদী অগ্রযোদ্ধা, বাংলাদেশের মাওবাদী আন্দোলনে শহিদ ও প্রয়াত প্রতিনিধিস্থানীয় কমরেডদের জীবন ও সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, প্রকাশক আতিফ অনীক, প্রথম সংস্করণ, নভেম্বর ২০২১, পৃষ্ঠা ৩৬।
  4. "Homage To Our Martyred Intellectuals"archive.thedailystar.net। The Daily Star। ২০১৬-১২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-২৭