সমরেশ বসু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সমরেশ বসু
জন্মসুরথনাথ বসু
(১৯২৪-১২-১১)১১ ডিসেম্বর ১৯২৪
বিক্রমপুর, ঢাকা
মৃত্যু১২ মার্চ ১৯৮৮(1988-03-12) (বয়স ৬৩)
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পেশালেখক, ঔপন্যাসিক
ভাষাবাংলা
নাগরিকত্বভারতীয়
ধরনউপন্যাস, ছোটগল্প
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্য অকাদেমি
দাম্পত্যসঙ্গীগৌরী বসু , ধরিত্রী বসু
সন্তানবুলবুল বসু (ভট্টাচার্য), দেবকুমার বসু, নবকুমার বসু, মৌসুমী বসু (সমাদ্দার), উদিতকুমার বসু

সমরেশ বসু (১১ ডিসেম্বর ১৯২৪ – ১২ মার্চ ১৯৮৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু;[১] কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূটভ্রমর ছদ্মনামে উল্লেখযযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

শৈশব ও কৈশোর[সম্পাদনা]

তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে ভারতের কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বাবার নাম মোহিনীমোহন বসু, মা শৈবালিনী বসু। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। তিনি একসময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ইছাপুর বন্দুক কারখানায় চাকরি করেছেন সমরেশ বসু। এই সময়পর্বের মধ্যেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক' (প্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২–১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, 'তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো কেরানি লেখক ছিলেন না, যাঁদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার অথচ ষোল আনার ওপর আঠারো আনা শখ আছে লেখক হওয়ার।'

রাজনৈতিক জীবন ও কারাবাস[সম্পাদনা]

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের বন্দুক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ সালে জেলও খাটতে হয়। জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

ছদ্মনাম[সম্পাদনা]

কালকূট মানে তীব্র বিষ। এটি ছিল তার ছদ্মনাম। 'অমৃত কুম্ভের সন্ধানে', 'কোথায় পাব তারে' সহ অনেক উপন্যাস তিনি এ নামে লিখেছেন। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে বেড়াতে ঘুরে বেরিয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধর্মী উপন্যাস। হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে তিনি অমৃতের সন্ধান করেছেন। তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে৷ অমৃত বিষের পাত্রে, মন মেরামতের আশায়, হারায়ে সেই মানুষে, তুষার শৃঙ্গের পদতলে ইত্যাদি এই ধারার উপন্যাস।

ভ্রমর ছদ্মনামে লেখা তিনটে উপন্যাস ১৩৮৯, ১৩৯০ ও ১৩৯১ বঙ্গাব্দের শারদীয়া প্রসাদএ প্রকাশিত হয়:'যুদ্ধের শেষ সেনাপতি' , 'প্রভু কার হাতে তোমার রক্ত' , 'প্রেম - কাব্য - রক্ত'।

সাহিত্য কর্ম[সম্পাদনা]

লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। 'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোলগোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে।

উপন্যাস সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০।

  • উত্তরঙ্গ (১৯৫১)
  • গঙ্গা (১৯৫৭)
  • বিবর (১৯৬৫)
  • প্রজাপতি
  • দেখি নাই ফিরে
  • সওদাগর
  • কোথায় পাবো তারে (১৯৬৮) (কালকূট ছদ্মনামে)
  • নয়নপুরের মাটি (১৯৫২)
  • বাঘিনী (১৯৬০)
  • চলো মন রুপনগরে
  • পাতক
  • মুক্তবেণীর উজানে
  • টানাপোড়েন
  • স্বীকারোক্তি
  • অপদার্থ
  • সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা
  • যুগ যুগ জীয়ে (১৯৮১)
  • মহাকালের রথের ঘোড়া (১৯৭৭)
  • শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে (১৯৮৪)
  • বাঘিনী
  • বিপর্যস্ত
  • শাম্ব
  • বিটি রোডের ধারে (১৯৫২)
  • শ্রীমতি কাফে (১৯৫৩)
  • অবশেষে
  • আম মাহাতো
  • কামনা বাসনা
  • কে নেবে মোরে
  • খন্ডিতা
  • গোগোল চিক্কুস নাগাল্যান্ড
  • ছায়া ঢাকা মন
  • জঙ্গল মহলের গোগোল
  • জবাব
  • তিন পুরুষ
  • দাহ
  • নাটের গুরু
  • নিঠুর দরদী
  • পথিক
  • প্রাণ প্রতিমা
  • বাঘিনী
  • বিদেশী গাড়িতে বিপদ
  • বিবেকবান/ভীরু
  • ভানুমতী ও ভানুমতীর নবরঙ্গ
  • মহাকালের রথের ঘোড়া
  • রক্তিম বসন্ত
  • শিমুলগড়ের খুনে ভূত
  • শেখল ছেঁড়া হাতের খোঁজে
  • সেই গাড়ির খোঁজে
  • স্বর্ণচঞ্চু
  • হৃদয়ের মুখ
  • প্রাচেতস

উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ[সম্পাদনা]

তার প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ২০০।

  • মরশুমের একদিন (১৯৫৩)
  • অকালবৃষ্টি (১৯৫৩)
  • ষষ্ঠ ঋতু (১৯৫৬)
  • মনোমুকুর (১৯৫৮)
  • উত্থান (১৯৬৬)
  • পশারিণী
  • ফুলবর্ষিয়া
  • মানুষ (১৯৭০)
  • বনলতা (১৯৬৭)
  • চেতনার অন্ধকারে (১৯৭২)
  • ছেঁড়া তমসুক (১৯৭১)
  • ধর্ষিতা (১৯৭২)
  • কামনা বাসনা (১৯৭৩)
  • জোয়ার ভাটা
  • ছায়াচারিণী (১৯৮৩)
  • কে নেবে মোরে (১৯৮২)
  • আদি মধ্য অন্ত
  • দেওয়াল লিপি
  • সুবর্ণা
  • আটাত্তর দিন পরে
  • পাপ-পুণ্য (১৯৬৭)
  • আইন নেই
  • বিকেলে শোনা
  • পঞ্চবহ্নি
  • অজানা
  • হ্রেষাধ্বনি (১৯৭৩)
  • বিদ্যুল্লতা (১৯৭৪)
  • বিপরীত রঙ্গ (১৯৭৫)
  • নাচঘর (১৯৭৬)
  • ঝিলেনগর
  • তৃষ্ণা
  • উজান
  • রজকিনী প্রেম (১৯৭৪)
  • কীর্তিনাশিনী (১৯৭৬)
  • কুন্তিসংবাদ (১৯৭৬)
  • মাসের প্রথম রবিবার (১৯৭৮)
  • অন্ধকারের গান (১৯৮০)
  • ও আপনার কাছে গেচে (১৯৮০)
  • আমি তোমাদেরই লোক (১৯৮৬)
  • আলোয় ফেরা
  • আলোর বৃত্তে
  • এখানে সেখানে
  • ছোট ছোট ঢেউ
  • পাহাড়ী ঢল
  • বিবর মুক্ত
  • যৌবন

উল্লেখযোগ্য গল্পসংকলন[সম্পাদনা]

  • শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৬৭)
  • গল্পসংগ্রহ [১ম] (১৯৭৮)
  • গল্পসংগ্রহ [২য়] (১৯৭৮)
  • গল্পসংগ্রহ [৩য়] (১৯৮০)
  • গল্পসংগ্রহ [৪র্থ] (১৯৮০)
  • গল্পসংগ্রহ [৫ম] (১৯৮১)
  • গল্পসংগ্রহ [৬ষ্ঠ] (১৯৮৩)
  • বাছাই গল্প (১৯৮৫)
  • স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৮৮)
  • গল্প সমগ্র [১-৪]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৫৯ ও ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। কালকূট ছদ্মনামে লেখা "শাম্ব" উপন্যাসের জন্য ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ মারা যান। মৃত্যুকালেও তার লেখার টেবিলে ছিল দশ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস দেখি নাই ফিরে। এই উপন্যাসের চিত্রাঙ্কন করেন প্রচ্ছদ শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সমরেশ বসুর ভক্ত ছিলেন। সমরেশ বসুর প্রয়াণের পর তিনি একটি কবিতা লেখেন - "দেখি নাই ফিরে"। তাতে শক্তি লিখেছেন -

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও ঐতিহাসিক ড. সুকুমার সেন এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত "হোমসিয়ানা" ক্লাবের নিয়মিত সদস্য ছিলেন সমরেশ বসু। তাঁর মৃত্যুর পর হোমসিয়ানার এক অধিবেশনে (৭ ই জুলাই ১৯৮৯) তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ড.সুকুমার সেন রচিত একটি সংস্কৃত কবিতা পাঠ করা হয় -

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. mamatimanush (২০২০-০২-১৪)। "সমরেশ বসু –" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]