বিষয়বস্তুতে চলুন

সরকারি তোলারাম কলেজ

স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৬′০০″ উত্তর ৯০°৩০′০০″ পূর্ব / ২৩.৬০০০° উত্তর ৯০.৫০০০° পূর্ব / 23.6000; 90.5000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সরকারি তোলারাম কলেজ
নীতিবাক্যজ্ঞানই আলো, সত্যই লক্ষ্য
ধরনসরকারি
স্থাপিত১৯৩৭
প্রতিষ্ঠাতাখগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
অধ্যক্ষঅধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
২০০+
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ
১০০+
শিক্ষার্থী২৫,০০০
স্নাতকবিএ, বিবিএ, বিএসসি, বিএসএস
স্নাতকোত্তরএমএ, এমবিএ, এমএসসি, এমএসএস
ঠিকানা
আল্লামা ইকবাল রোড, নারায়ণগঞ্জ
, , ,
শিক্ষাঙ্গনশহুরে
সংক্ষিপ্ত নামসতোক
অধিভুক্তিজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটwww.tolaramcollege.edu.bd
মানচিত্র

সরকারি তোলারাম কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; যেটি ১৯৩৭ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১] কলেজটি বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত। কলেজটিতে মোট সাতটি ভবন রয়েছে- প্রশাসনিক ভবন, কলা ভবন (শহিদ জননী জাহানারা ইমাম ভবন), রসায়ন ভবন, বিজ্ঞান ভবন, মূল ভবন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক কাম এক্সামিনেশন ভবন এবং ব্যবসায় শিক্ষা ভবন। ব্যবসায় শিক্ষা ভবনের নিচ তলায় অডিটোরিয়াম অবস্থিত যেটি পদ্মা মিলনায়তন নামে পরিচিত, দ্বিতীয় তলায় রয়েছে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন সুবিশাল লাইব্রেরি। কলেজটিতে বর্তমানে ১৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এছাড়া এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কলেজের নিজস্ব দুইটি বাস রয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসটির আয়তন প্রায় ৭ একর।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ বৌদ্ধ-হিন্দু-পাঠান-মোঘলের পদস্পর্শে নগর সভ্যতাই পদার্পণ করেছে। ইংরেজ কর্মচারী ‘ভিখন লাল ঠাকুর’ মনিবদের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের উপঢৌকন হিসেবে এই এলাকার কিছু অংশের ভোগসত্ব লাভ করেছিলেন। ধর্মপরায়ণ এই মনীষী লক্ষ্মী নারায়ণয়ের আখরা নামের মন্দিরে নারায়াণ বিগ্রহ প্রতিস্থাপন করেছিলেন। এই আখড়া ও মন্দিরকে ঘিরে একটি ‘গঞ্জ’ তৈরি হয়েছিল।

কালের বিবর্তনে গঞ্জের প্রভাবে একসময় জায়গাটির নামকরণ হয় ‘নারায়ণগঞ্জ’। পাট এবং পৃথিবী বিখ্যাত মসলিন কাপড়ের বদৌলতে বিদেশিদের আনাগোনায় নারায়ণগঞ্জ দিনরাত কর্মচঞ্চল থাকত। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ শহর প্রথম থেকেই ধন-সম্পদে পূর্ণ ছিল। সম্পদের মোহে এই শহরের সবাই যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে মশগুল, তখন একান্ত-মনে বিদ্যার আলো বিস্তারের চিন্তায় ব্যস্ত বাবু খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

১৯৩৭ সালে নারায়ণগঞ্জের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ খগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী তোলারাম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি মাত্র পাঁচ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস শুরু করেছিলেন। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য খগেন্দ্র নাথ বৃহত্তর ময়মনসিংহের বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরের দানবীর ‘রণদা প্রসাদ সাহা’-র দারস্থ হন । বিদ্যা-সম্পর্কিত পরিকল্পনার কথা শুনে তিনি (রণদা প্রসাদ) তাঁকে পঁচিশ হাজার টাকা দান করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জের পাট ব্যবসায়ী তোলারাম বসরাজের ছেলে ‘মদন লাল সারোগী’ও কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য পঁচিশ হাজার টাকা দান করেন। এই অর্থে খগেন্দ্র নাথ গড়ে তোলেন ‘নারায়াণগঞ্জ উইমেন্স কলেজ’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বালিকা কলেজটি বন্ধ হয়ে যায়।

যুদ্ধোত্তর কালে খগেন্দ্র নাথ আবার কলেজ চালু করতে উদ্যোগ নেন। এই কাজে তিনি শিক্ষানুরাগী ও দাতা পাট ব্যবসায়ী ‘তোলারাম বসরাজ’কে সাথে পান। তোলারাম তিনি কলেজ নির্মাণ করার জন্য এক লক্ষ টাকা দান করেন। দাতার নামানুসারে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে নারায়ণগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ব্যায়ামাগারে শুরু হয় ‘তোলারাম কলেজ’। ১৯৫৬ সালে ‘আল্লামা ইকবাল' সড়কে জমি ক্রয় করে এক তলা ভবন নির্মাণের পর পাঠদান শুরু হয়। ভবনটি উদ্বোধন করেন পূর্ব বঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী  ‘আবু হোসেন সরকার’। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ ছিলেন খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বর্তমান কলেজের মূল বহুতল ভবনটি তৈরি হয় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। আর পি সাহার (রণদাপ্রসাদ সাহা) দেড় লাখ টাকার অনুদানে তৈরি হয় তোলারাম কলেজের বিজ্ঞান গবেষণাগার এবং ক্রয় করা হয় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

তোলারাম কলেজ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার বাইরে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে। ষাটের দশক থেকেই চাকুরিজীবী ও কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের জন্য তোলারাম কলেজে নৈশ বিভাগ চালু ছিল। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে নৈশ বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম থেকেই এই কলেজের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলও ছিল সন্তোষজনক।

১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘তোলারাম কলেজ’-এর শিক্ষার্থীরা পাক-ভারত সফর করেছিল। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ডায়মন্ড সিনেমা হলে’ মঞ্চস্থ করেছিল ‘শাহজাহান’ এবং ‘মহুয়া’ নাটক। ১৯৬৩  খ্রিস্টাব্দের ‘ছাত্রসংসদ’ দেয়ালিকা এবং বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করে সুনাম অর্জন করেছিল। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন তোলারাম কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আওয়াল।

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ এই কলেজটিকে জাতীয়করণ করা হয়। তোলারাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং সাবেক সংসদ সদস্য জনাব এ. কে. এম শামীম ওসমানের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় ১৯৯৬-৯৭ সেশনে সরকারি তোলারাম কলেজে ১২টি বিষয়ে অনার্স এবং ০৫টি বিষয়ে এম.এ কোর্স খোলা হয়। তাঁর ঘোষণায় কলেজের কলা ভবনের নামকরণ করা হয় ”শহিদ জননী জাহানারা ইমাম ভবন”। বর্তমানে কলেজটিতে এইচ এস সি, বি এ (পাস), ১৪টি বিষয়ে অনার্স, ০৫টি বিষয়ে এম,এ প্রথমপর্ব এবং ১৪টি বিষয়ে এম, এ শেষপর্ব চালু রয়েছে। বর্তমানে ‘সরকারি তোলারাম কলেজ’- এ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ১৮০০০ জন।

সরকারি তোলারাম কলেজের’ সহশিক্ষা কার্যক্রমও রয়েছে। এই কলেজে ইনডোর গেইম, আউটডোর গেইম, বার্ষিক মিলাদ, বার্ষিক বনভোজন এবং শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের রোভার স্কাউট, বিএনসিসি এবং গার্লসিং রোভাররা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। ভালো ফলাফলের কারণে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে  সরকারি তোলারাম কলেজ জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজরূপে পুরস্কৃত হয়।[১]

বিভাগ সমূহ[সম্পাদনা]

এই কলেজে মোট ১৪টি বিভাগ রয়েছে;[২] এগুলো হলঃ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "About Govt Tolaram College"। সরকারি তোলারাম কলেজ। ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৫ 
  2. "Department"। সরকারি তোলারাম কলেজ। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]