বিষয়বস্তুতে চলুন

হ্যাজাক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
« পেট্রোম্যাক্স ৮২৯ » প্যারাফিন প্রেসার বাতি
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের একটি পেট্রোম্যাক্স বাতি, রয়েছে বাত্তিকালোয়া জাদুঘরে

হ্যাজাক (ইংরেজি: Petromax বা paraffin lamp) হলো বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সারা বিশ্বে প্রখর আলোক বাতি হিসাবে ব্যবহৃত; যা সংযুক্ত বাল্প-আকৃতির জালের মতো আবরণ (ম্যান্টেল) উত্তপ্ত হয়ে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে।[১] এর ইংরেজি নাম পেট্রোম্যাক্স। কেউ কেউ এটাকে প্যারাফিন প্রেসার লণ্ঠন বলে।[২] বর্তমানে এ বাতিটি বিলুপ্ত প্রায়।[৩]

পরিচয় ও গঠন[সম্পাদনা]

দেখতে হ্যাজাক বাতি হারিকেনের মতোই। তবে আকারে বেশ বড়। আর প্রযুক্তিও ভিন্ন। জ্বলে পাম্প করে চালানো কেরোসিনের কুকারের মতো একই প্রযুক্তিতে। চুলার বার্নারের বদলে এতে আছে ঝুলন্ত একটা সলতে। যেটা দেখতে ১০০ ওয়াটের সাদা টাংস্টেন বাল্বের মতো। অ্যাজবেস্টরে তৈরি। এটা পুড়ে ছাই হয়ে যায় না। পাম্প করা তেল একটা নলের ভেতর দিয়ে গিয়ে স্প্রে করে ভিজিয়ে দেয় সলতেটা। এটা জ্বলতে থাকে চেম্বারে যতক্ষণ তেল আর হাওয়ার চাপ থাকে ততক্ষণ। তেলের চেম্বারের চারদিকে থাকে চারটি বোতাম। একটি পাম্পার। একটি অ্যাকশন রড। একটা হাওয়ার চাবি। আর একটি অটো লাইটার বা ম্যাচ। অ্যাকশন রডের কাজ হচ্ছে তেল বের হওয়ার মুখটা পরিষ্কার রাখা। হাওয়ার চাবি দিয়ে পাম্পারে পাম্প করা বাতাসের চাপ কমানো-বাড়ানো হয়। অটো ম্যাচ করে দিয়াশলাইয়ের কাজ। একবার হাওয়া দিলে জ্বলতে থাকে বেশ কয়েক ঘণ্টা।[৩]

আবিষ্কার[সম্পাদনা]

জার্মানের ম্যাক্স গ্রেটেজ ১৯১০ সালে পেট্রোম্যাক্স ল্যাম্প বা হ্যাজাক বাতি আবিষ্কার করেন।[৪]

প্রকার ভেদ[সম্পাদনা]

  • ডাবল বিচ্ছু। তৈরি হতো জার্মানিতে
  • অ্যাংকর-অ্যাংকর চায়নার তৈরি
  • ডে-লাইট হ্যাজাক।[৩]

জ্বালানি[সম্পাদনা]

কেরোসিন ও ডিজেল।[৩]

ব্যবহার[সম্পাদনা]

গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, যাত্রা, সার্কাস, পালাগান, হাট-বাজার, মেলাতে এই বাতির ব্যবহার হতো। এই বাতির আলোর প্রখরতা তীব্র। বলা হয় ৪০০ ওয়াটের সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতির সমপরিমাণ আলো দিতে সক্ষম এই বাতি।[২][৩]

হ্যাজাকের এ-কাল[সম্পাদনা]

নিয়মিত ব্যবহার না থাকলেও একবারেই বিলীন হয়ে যায়নি হ্যাজাক। এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের কেউ কেউ মুরগি আর মাছের খামারে হ্যাজাক বাতি ব্যবহার করে, বিশেষ করে একদিনের বাচ্চা যখন শেডে তোলা হয়, তখন তাদের ৪০ ঘণ্টাই উজ্জ্বল আলোর দরকার হয়। সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতিতে সেটা সম্ভব হয় না বলে খামারিরা হ্যাজাক ব্যবহার করেন। আবার বর্ষার পর শীতের শুরুতে যখন নদী-নালায় পানি কমতে থাকে, তখন রাতের বেলায় হ্যাজাক জ্বালিয়ে মাছ শিকার করে কেউ কেউ। হ্যাজাকের তীব্র আলোতে ছুটে আসে মাছ। তবে এটা চলে বছরে মাত্র মাস দুয়েক।[৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. পরিষদ, সম্পাদনা (২০১৭)। আধুনিক বাংলা অভিধান। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ১৪০৮। আইএসবিএন 9840757199 
  2. "হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তি হ্যাজাক বাতি"Techtunes | টেকটিউনস। ২০১৯-০৭-২৩। ২০২১-০৮-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১২ 
  3. "হ্যাজাক জ্বলে যাক | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১২ 
  4. "Info, History of Petromax"hytta.de। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১২