একব্যাবহারিক

মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত গুহা মন্দির, অজন্তা গুহাসমূহ, মহারাষ্ট্র, ভারত।

একব্যাবহারিক (সংস্কৃত: एकव्यावहारिक) হলো আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায় একটি, এবং মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের উপ-সম্প্রদায়।

ইতিহাস

মহাসাংঘিকের সাথে সম্পর্ক

তারানাথের মতে, একব্যাবহারিক, লোকোত্তরবাদ ও কুক্কুথিক মূলত একই। এছাড়াও তিনি এটিকে মহাসাংঘিকদের জন্য সাধারণ শব্দ হিসেবেও মনে করেন। একব্যাবহারিক, কুক্কুথিক ও লোকোত্তরবাদ হলো তিনটি দল যা মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের প্রথম বিভক্তি থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। অ্যান্টনি কেনেডি ওয়ার্ডার উল্লেখ করেন যে একব্যাবহারিকরা পরবর্তী সময়ে খুব কমই পরিচিত ছিলো এবং সম্ভবত মহাসাংঘিকের অংশ হিসেবে বিবেচিত হত।

প্রাথমিক ইতিহাস

ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতীয় সন্ন্যাসী পরমার্থ লিখেছেন যে বুদ্ধের পরিনির্বাণের ২০০ বছর পরে, মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ অংশ রাজগিরির উত্তরে চলে গেছে, এবং মহাযান শিক্ষাগুলিকে তাদের ত্রিপিটক-এ আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত কিনা তা নিয়ে বিভক্ত ছিল। এই বিবরণ অনুসারে, তারা মহাযান গ্রন্থগুলির কর্তৃত্ব গ্রহণ করার আপেক্ষিক পদ্ধতি ও মাত্রার উপর ভিত্তি করে তিনটি দলে বিভক্ত। পরমার্থের মতে, একব্যাবহারিকরা মহাযান সূত্রগুলিকে বুদ্ধের বাণী (বুদ্ধচন) হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

মতবাদ

আটচল্লিশটি তত্ত্ব

বসুমিত্রের সাম্যভেদোপরচনচক্র একব্যাবহারিকবাদী, লোকোত্তরবাদী ও কুক্কুথিকবাদীদের মতবাদগতভাবে আলাদা করা যায় না বলে মনে করেন। বসুমিত্রের মতে, এই তিনটি মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ৪৮টি তত্ত্ব মিল ছিল। ৪৮টি বিশেষ তত্ত্বের মধ্যে যা সাম্যভেদোপরচনচক্র দ্বারা এই সম্প্রদায়গুলিকে আরোপিত করা হয়েছে, ২০টি বিষয় বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বদের সুপ্রমন্ডন প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত। সাম্যভেদোপরচনচক্রের মতে, এই চারটি দল মনে করেছিল যে বুদ্ধ মনের এক মুহুর্তে সমস্ত ধর্ম জানতে পারেন। যাও জিহুয়া লিখেছেন:

তাদের দৃষ্টিতে, বুদ্ধ নিম্নলিখিত অতিপ্রাকৃত গুণাবলী দ্বারা সজ্জিত: অতিক্রান্ততা (লোকোত্তর), অপবিত্রতার অভাব, তাঁর সমস্ত উচ্চারণ তাঁর শিক্ষা প্রচার করে, তাঁর সমস্ত শিক্ষা একক উচ্চারণে ব্যাখ্যা করা, তাঁর সব কথাই সত্য, তার শারীরিক শরীর সীমাহীন, তাঁর শক্তি (প্রভা) সীমাহীন, তাঁর জীবনের দৈর্ঘ্য সীমাহীন, সংবেদনশীল প্রাণীদের বোধোদয়ী করতে এবং তাদের প্রতি বিশুদ্ধ বিশ্বাস জাগ্রত করতে কখনই ক্লান্ত হবেন না, ঘুম বা স্বপ্ন নেই, প্রশ্নের উত্তরে বিরতি নেই, এবং সর্বদা ধ্যানে (সমাধি)।

অতীন্দ্রিয় বক্তৃতা

একব্যাবহারিকবাদীদের নামটি তাদের মতবাদকে নির্দেশ করে যে বুদ্ধ একক এবং একীভূত অতীন্দ্রিয় অর্থের সাথে কথা বলেন। তারা বুদ্ধের অতীন্দ্রিয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন, জোর দিয়েছিলেন যে তিনি চিরন্তন বোধোদয়ী এবং মূলত অ-ভৌতিক ছিলেন। ঠিক যেমন বুদ্ধের বাণীগুলিকে অতিক্রান্ত অর্থের সাথে উচ্চারিত করা হয়েছিল, তেমনি চতুরার্য সত্যকে জ্ঞানের সাথে পুরোপুরি উপলব্ধি করা হয়েছিল।

মৌলিকভাবে বিশুদ্ধ মন

একব্যাবহারিকবাদীদের ধারণা ছিল যে সংবেদনশীল প্রাণীদের আদি বা মৌলিকভাবে বিশুদ্ধ মনের অধিকারী, কিন্তু এটি কষ্টের দ্বারা জর্জরিত এবং অস্পষ্ট। মনের প্রকৃতির এই ধারণাটি মৌলিকভাবে বুদ্ধের মতই, বুদ্ধ প্রকৃতির মহাযান মতবাদ এবং বুদ্ধের ধর্মকায় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেইসাথে মহাযান সূত্রের মতবাদ যেমন সদ্ধর্ম পুণ্ডরীক সূত্র এবং অবতংসক সূত্রের সাথে অনুকূলভাবে তুলনা করা হয়েছে।